দৈনন্দিন সুরক্ষা প্রশ্নোত্তর

ভালুকের হামলা বেড়ে চলেছে; কীভাবে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়

(১) অনেক এলাকায় ভালুকের হামলা বাড়ছে

এনএইচকে দৈনন্দিন জীবনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারবাহিকে আমরা চলতি বছরে জাপানে ক্রমবর্ধমান ভালুকের হামলার সংখ্যা এবং এগুলো কীভাবে রোধ করবেন তার উপর নজর দেব। আজ আমরা পরিস্থিতির উপর আলোকপাত করব।

এনএইচকে’র প্রণয়ন করা উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে যে, কমপক্ষে ১৮০ জন লোক চলতি বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়ে ভালুকের হামলায় আহত হয়েছেন বা নিহত হয়েছেন। এটি ছিল একটি রেকর্ড সর্বোচ্চ সংখ্যা, যা ৩ বছর আগে সরকারের নথিভুক্ত করা বছরে সর্বোচ্চ ১৫৮টি ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা থেকে বেশি।

অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখে ৭৯ বছর বয়সী এক নারীকে তার নিজের বাড়ির চত্বরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে যে তাকে একটি ভালুক আক্রমণ করেছিল, কেননা এর আশপাশে ভালুকের পায়ের ছাপ খুঁজে পাওয়া গেছে।

ইওয়াতে জেলার হাচিমানতাই পাহাড়ে উভয়ই ৭০’এর কোঠার একজন নারী এবং তার স্বামীকে গবাদি পশুর জন্য মাশরুম সংগ্রহের সময়ে তাদের উপর ভালুকের হামলা হওয়ার পরে, অক্টোবর মাসের ২০ তারিখে, সেই নারী মারা যান। মাচিদা শহরের মতো টোকিও’র উপকণ্ঠের এলাকায়ও ভালুকের আনাগোনা চোখে পড়েছে।

একজন বিশেষজ্ঞ ইঙ্গিত দেন যে, এই আক্রমণ বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যের কারণ সম্ভবত পাহাড়ী এলাকায় ভালুকের খাবারের আকাল। টোকিও কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কোইকে শিনসুকে বলছেন, বছরের এই সময়ে ভালুকেরা প্রধানত ওক গাছের ফল খেয়ে থাকে, কিন্তু চলতি বছরে এই ফলের ফলন তেমন ভাল হয়নি, তাই প্রাণিরা মানুষ যেখানে বসবাস করে খাদ্যের খোঁজে সেখানে চলে আসছে। সাধারণত তারা এইসব স্থানে খুব একটা আসে না।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(২) ভালুকজনিত ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে পদক্ষেপ

এনএইচকে দৈনন্দিন জীবনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারবাহিকে আমরা এবছর জাপানে ভালুকের হামলার সংখ্যা নজিরবিহীন মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার উপর আলোকপাত করছি। একই সাথে আমরা এর নেপথ্যের কারণ এবং গ্রহণীয় নিরাপত্তা পদক্ষেপের দিকে নজর দিচ্ছি। আজ আমরা ভালুকজনিত ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো।

ভালুকজনিত ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ করতে মানব বসতি থেকে জীবজন্তুকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। ভালুক সম্ভবত খাবারের সন্ধানে আবাসিক এলাকায় আসে।

বিশেষ করে পার্সিমন ও কাঠবাদামের মতো ফল ও বাদাম ভালুকের পছন্দ। ফলে, প্রথমত যা করা দরকার তা হলো, পাকা ফল ও বাদাম গাছে রেখে না দেয়া। যত দ্রুত সম্ভব সেগুলো পেরে ফেলুন। সবগুলো খেতে না পারলে ভালুক যেন এগুলোর খোঁজে চলে না আসে, তা নিশ্চিত করার জন্য অবশিষ্ট অংশ ফেলে দিন।

দ্বিতীয়ত, রান্নাঘরের বর্জ্য কিংবা গৃহপালিত জীবজন্তুর খাবার বাইরে রেখে দেবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কড়া ঘ্রাণ ভালুককে আকৃষ্ট করে। ফলে এসব খাবারের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পরা বন্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

এসব কিছুর বাইরে ভালুক যেখানে লুকিয়ে থাকতে পারে, সেররকম ঝোপ-ঝাড়ের মতো জায়গা ভেঙ্গে ফেলাও হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। শহরে অবস্থান করার পর ভালুক কখনও কখনও ভয় পেয়ে যায় এবং ভবন ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। আর তাই আপনার বাড়ি এবং সংশ্লিষ্ট অংশ তালা দিয়ে রাখুন

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৩) ভালুকের মুখোমুখি হয়ে পড়লে কী করণীয়

এনএইচকে দৈনন্দিন জীবনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারবাহিকে আমরা এবছর জাপানে ভালুকের হামলার সংখ্যা নজিরবিহীন মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার উপর আলোকপাত করছি। একই সাথে আমরা এর নেপথ্যের কারণ এবং গ্রহণীয় নিরাপত্তা পদক্ষেপের দিকে নজর দিচ্ছি। আজ আমরা ভালুকের মুখোমুখি হয়ে পড়লে আপনার কী করণীয় তা নিয়ে আলোচনা করবো।

রাকুনো গাকুয়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাতো ইয়োশিকাযু এই পরামর্শ দিচ্ছেন।

কাছাকাছি কোন ভালুক দেখতে পেলে প্রথমে থেমে যান, তারপর ধীরে ধীরে পিছনে হাঁটতে থাকুন। ভালুকের গতিবিধিতে নজর রেখে নিজের সাথে দূরত্বটা বাড়িয়ে নিন।

আপনার কাছে যদি ভালুক তাড়ানোর স্প্রে থাকে তবে তা হাতের কাছে রাখুন যাতে করে দ্রুত সেটি ব্যবহার করতে পারেন। ঝাল লঙ্কায় যে ধরনের উদ্দীপক উপাদান আছে স্প্রেতেও সেই একই জিনিস থাকে, তাই ভালুকের চোখ, নাক এবং মুখ লক্ষ্য করে স্প্রে করতে পারলে তা সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে। তবে নিজের থেকে স্প্রেটা দূরে রাখবেন যাতে করে আপনার শরীরের কোথাও না চলে আসে।

ভালুক তাড়া করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা আপনাকে ভয় দেখানোর জন্য এবং গুরুতরভাবে কোন মানুষকে আক্রমণ করার ইচ্ছা থেকে নয়। আপনি কোন ভালুকের সংস্পর্শে এলে, তাকে প্রতিরোধ না করলে এবং নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টায় কোন রকম অঙ্গ-ভঙ্গি না করলে আপনার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। পিঠে যদি ব্যাকপ্যাক থাকে তবে মাটিতে মুখ নিচু করে শুয়ে যান যাতে করে আপনার পেট সুরক্ষিত থাকে। আপনার ঘাড় হল সবচেয়ে দুর্বল স্থান, তাই দুটি হাত দিয়ে ঘাড় চাপা দিয়ে রাখুন।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৪) সাইকেল চালানোর সময় ভালুকের মুখোমুখি হলে কী করবেন

এনএইচকে দৈনন্দিন জীবনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারবাহিকে আমরা এবছর জাপানে ভালুকের হামলার সংখ্যা নজিরবিহীন মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার উপর আলোকপাত করছি। একই সাথে আমরা এর নেপথ্যের কারণ এবং গ্রহণীয় নিরাপত্তা পদক্ষেপের দিকে নজর দিচ্ছি। আজ আমরা সাইকেলে চড়ে কোথাও যাওয়ার সময় হঠাৎ ভালুকের মুখোমুখি হয়ে পড়লে কী করবেন তা নিয়ে আলোচনা করবো।

রাকুনো গাকুয়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাতো ইয়োশিকাযু এই পরামর্শ দিচ্ছেন।

পায়ে হেঁটে যাওয়ার মতোই, সাইকেলে যাওয়ার সময় যদি দেখেন কাছেই ভালুক দাঁড়িয়ে আছে, তাহলে আর এগোবেন না, থেমে যান। তারপর ধীরে ধীরে পেছনে সরে গিয়ে, ভালুকটির গতিবিধিতে নজর রেখে উল্টো দিকে ঘুরে যান।

এক্ষেত্রে যা অবশ্যই মনে রাখা দরকার তা হোল ভালুকের কাছ থেকে ধীরে ধীরে তফাতে সরে যাওয়ার সময় আপনাকে শান্ত থাকতে হবে। ভয়ের চোটে তাড়াতাড়ি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করাটা হবে ভয়ানক বিপজ্জনক, কারণ পলায়মান প্রাণিকে ধাওয়া করা ভালুকের অভ্যাস। বলা হয়ে থাকে, ভালুক ঘন্টাপ্রতি প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে সক্ষম।

যেহেতু সাইকেল চালানোর সময় তেমন কোনও শব্দ হয় না, তাই আগেভাগে টের না পাওয়ার দরুন সাইকেল আরোহীর সাথে ভালুকের আকস্মিক মুখোমুখি হয়ে পড়ার আশংকা থাকে। ভালুকের আবাসস্থলের কাছাকাছি দিয়ে সাইকেল চালানোর সময় লোকজনকে এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৫) গাড়িতে অবস্থানকালে ভালুকের মুখোমুখি হলে কী করবেন?

এনএইচকে দৈনন্দিন জীবনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারবাহিকে আমরা এবছর জাপানে ভালুকের হামলার সংখ্যা নজিরবিহীন মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার উপর আলোকপাত করছি। একই সাথে আমরা এর নেপথ্যের কারণ এবং গ্রহণীয় নিরাপত্তা পদক্ষেপের দিকে নজর দিচ্ছি। আজ আমরা গাড়িতে থাকা অবস্থায় ভালুকের মুখোমুখি হয়ে পড়লে কী করবেন তা নিয়ে আলোচনা করবো।

যাত্রী থাকা গাড়ির বিরুদ্ধে ভালুকের সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা কম। এরকম পরিস্থিতির জন্য, রাকুনো গাকুয়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাতো ইয়োশিকাযু নিম্নলিখিত পরামর্শগুলো দিয়েছেন।

আপনি নিরাপদ বোধ করছেন, তাই বলে গাড়িতে থাকা অবস্থায় ভালুকের কাছে যাবেন না। জানালাগুলো বন্ধ রাখুন। ছবি তোলার জন্য গাড়ি থেকে বের হবেন না কারণ এটি বিপজ্জনক।

▼গাড়ির হর্ন বাজিয়ে ভালুককে সরে যাওয়ার জন্য বিরক্ত করবেন না। যদি ভালুক রাস্তার পাশে খাবার খায় এবং নড়াচড়া না করে, তাহলে ধীরে ধীরে প্রাণিটির পাশ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে এগিয়ে যান। যদি ভালুক রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে এটি চলে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করার পরেই কেবল গাড়ি চালাবেন। ভালুকরা সাধারণত ডিসেম্বর মাসে হাইবারনেট বা শীতনিদ্রায় যেতে শুরু করে, তবে এক্ষেত্রে এটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে চলতি বছর দীর্ঘায়িত উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে এই সময়কাল বিলম্বিত হতে পারে। তাই, ভালুক শীতনিদ্রায় যাওয়া শুরু না করা পর্যন্ত জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে হবে।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।