দুর্যোগ প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর

হিটস্ট্রোক কিভাবে প্রতিহত করা যায়? এরকম ঘটলে কি করা দরকার?

(১) হিটস্ট্রোক কি?

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। প্রতি বছর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত অনেক মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কিছু লোকজন এমন কি মারাও যান। হিটস্ট্রোককে তাই এক ধরনের “দুর্যোগ” বলা যেতে পারে। হিটস্ট্রোক নিয়ে এটা হচ্ছে আমাদের প্রথম নতুন ধারাবাহিক। এর কারণ এবং কিভাবে এটা প্রতিহত করা যায় সে সম্পর্কে জেনে নিয়ে হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করা হচ্ছে এর লক্ষ্য।

বাতাসের অনুপস্থিতি কিংবা উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সহ সরাসরি কড়া সূর্যের আলো এসে পড়া অবস্থায় সেরকম পরিস্থিতি দেখা দেয়। গরমে অতিরিক্ত ঘেমে যেয়ে শরীরে তরল এবং লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। তাপ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে উঠে এবং উত্তাপ দেহে আটকা পড়ে গিয়ে এর থেকে হিটস্ট্রোক হয়। খুব গরমের বছরে জাপানে এক হাজারের বেশি মানুষ হিটস্ট্রোকে মারা যান।

হিটস্ট্রোকের প্রধান কিছু উপসর্গ হচ্ছে মাথা ঘোরানো, মাথায় হালকা বোধ করা এবং পায়ের সঙ্কোচন। বিরতিহীন ঘাম ঝরা, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং অবসাদ বোধ করাও হচ্ছে হিটস্ট্রোকের সাথে সম্পর্কিত উপসর্গ। তবে অসুস্থ শারীরিক অবস্থা ব্যক্তি ভিত্তিতে ভিন্ন হতে পারে এবং কিছু মানুষ এছাড়া দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা, হাত ও পা অবশ হয়ে যাওয়া, অনিয়মিত হৃৎ-স্পন্দন, পেশির ব্যথা ও ডায়রিয়া হওয়া নিয়েও অভিযোগ করেন।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের ২১শে জুলাই পর্যন্ত নেয়া।

(২) হিটস্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় কি?

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। হিটস্ট্রোকের ওপর আমাদের নতুন ধারাবাহিকের এই পর্বে কিভাবে হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায় তার কয়েকটি উপায় বলে দেওয়া হচ্ছে।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যদি নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা যায়, তাহলে হিটস্ট্রোক এড়িয়ে চলা এমন কিছু কঠিন ব্যাপার হবে না।

১) শরীরে যাতে পানির পরিমাণ যথেষ্ট থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
আর্দ্রতায় ভরা ভ্যাপসা গরমে তৃষ্ণার্ত বোধ করার আগেই পানি এবং সোডিয়াম খান বার বার।

২) বাইরে থেকে রোদ আটকানোর ব্যবস্থা নিন।
ঘরের জানালা ও দরজায় ব্লাইন্ড বা পর্দা লাগিয়ে বাইরে থেকে ঘরের মধ্যে সরাসরি রোদ এসে পড়া আটকানোর ব্যবস্থা করুন।

৩) বাইরে বেরোনোর সময়, হয় মাথায় টুপি পরে নিন অথবা রোদে ব্যবহারের ছাতা দিয়ে মাথা আড়াল করুন।

৪) হিটস্ট্রোক প্রতিরোধের একটা ভাল উপায় হলো ব্যায়াম করা।
ব্যায়াম করুন। যেমন দিনের মধ্যে গরম যখন তুলনায় কম থাকে তখন হাঁটুন যাতে শরীর তার প্রয়োজন মত ঘাম ঝরিয়ে নিতে পারে ভালোভাবে।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের ২২শে জুলাই পর্যন্ত নেয়া।

(৩) শিশু এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। হিটস্ট্রোক বিষয়ক আমাদের চলমান ধারাবাহিকের এই পর্বে শিশু এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের উপর নজর দেয়া হবে, যাদের এক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত।

শিশুরা হিটস্ট্রোকের ক্ষেত্রে বেশি সংবেদনশীল হয় কারণ তাদের দেহের তাপমাত্রা সামঞ্জস্য করার ক্ষমতা পুরোপুরি বিকশিত হয় না। এর আরেকটি কারণ হল তারা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো লম্বা নয়, তাই তাদের দেহের উপর ভূমি থেকে প্রতিফলিত তাপের প্রভাব বেশি হয়। যদি একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের মাথার আশেপাশের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে একটি শিশুর উচ্চতায় এটি হবে ৩৫ ডিগ্রি। আর একটি স্ট্রলারে অবস্থান করা শিশুর ক্ষেত্রে এই তাপমাত্রা আরও বেশি হবে। তাই গরমের দিনগুলোতে বাচ্চাদের মাথায় টুপি পরা উচিত, তাদের সাথে ঠান্ডা পানীয় রাখতে হবে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে খেলাধুলা এড়িয়ে যেতে হবে।

অন্যদিকে, বয়োজ্যেষ্ঠরা নিজেদের অজান্তেই পানিশূন্যতার মুখোমুখি হতে পারেন কারণ তারা অপেক্ষাকৃত তরুণ বয়সীদের মতো উষ্ণতা বা তৃষ্ণা অনুভব করেন না এবং এরফলে তাদের সময়মতো পর্যাপ্ত তরল পান না করার সম্ভাবনা থাকে। এরফলে, ধীরে ধীরে তাদের ঘাম নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, শরীরের তাপমাত্রা সামঞ্জস্য করার সক্ষমতাও অকার্যকর হয়ে যেতে পারে এবং পরিশেষে, তারা হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া, প্রবীণ ব্যক্তিরা এমনকি অত্যন্ত আর্দ্র রাতেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে পারেন এবং টয়লেটে যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে তারা হয়ত যথেষ্ট পরিমাণে পানীয় পান না করতে পারেন। তাই একা বসবাসকারী, বা পরিবারের সাথে থাকলেও দিনের বেলা একা থাকেন, এরকম বয়োজ্যেষ্ঠদের খোঁজখবর নেয়া তাদের আশেপাশে থাকা লোকজনের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের ২৫শে জুলাই পর্যন্ত নেয়া।

(৪) কি করা দরকার – ১ গরম এড়িয়ে যাওয়া

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। হিটস্ট্রোক বিষয়ক আমাদের চলমান ধারাবাহিকের এই পর্বে আমরা গ্রীষ্মের গরম থেকে কিভাবে নিজেদের রক্ষা করবেন সেদিকে নজর দেব।

আপনার নিজের শারীরিক ক্ষমতার উপর যদি আপনার আস্থা না থাকে বা আপনার আগের কোন উপসর্গ থাকে, তাহলে আপনাকে আমরা পরামর্শ দেব গরম সহ্য করে নেয়ার জন্য আপনি যেন কঠিন পরিশ্রম না করেন, বরং আপনাকে বলব আপনি যেন তা এড়িয়ে যান। তাপমান যন্ত্রটি এমন স্থানে রাখুন যেন আপনি সহজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস পরীক্ষা করার মাধ্যমে ঘরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে পারেন। অত্যন্ত গরমের দিনগুলোতে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভাল এবং ঘরের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে রাখা এবং আর্দ্রতা ৭০ শতাংশ বা তার নিচে রাখার জন্য সকাল থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার থাকার স্থানকে আরামদায়ক করে রাখুন।

আপনি যদি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বার বার চালু এবং বন্ধ করতে থাকেন, তাহলে তা বিদ্যুৎ খরচকে বাড়িয়ে দেবে। অপেক্ষাকৃত বেশি তাপমাত্রা নির্ধারণ করে এবং বাতাসের প্রবাহ স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ মোডে রেখে অব্যাহতভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালালে আপনি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারবেন। দেয়ালের দিকে বা অনুভূমিকভাবে বাতাস প্রবাহিত করাটা ভাল যেন সরাসরি বাতাস আপনার গায়ে না লাগে। আপনি যদি বাতাস চারিদিকে প্রবাহিত করতে চান বা আপনার দিকে প্রবাহিত করতে যান, তাহলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের পাশাপাশি অতিরিক্ত একটি ফ্যান ব্যবহার করুন।

যখন কয়েকদিনের জন্য সারারাত তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকবে, তখন রাতে ভাল ঘুমানোর জন্য আপনাকে দুর্বল বায়ু প্রবাহের মোডে দিয়ে সারারাত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালিয়ে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি পরবর্তী দিন আপনার হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়াকে রোধ করতে সাহায্য করবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার দিকেও আপনার নজর দেয়া উচিত, কেননা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বাতাসকে শুষ্ক করে ফেলে।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের ২৬শে জুলাই পর্যন্ত নেয়া

(৫) কি করা দরকার – ২ খাদ্য ও তরল পানীয়

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। হিটস্ট্রোক নিয়ে আমাদের এই ধারাবাহিকের এবারের পর্বে আমরা খাদ্য ও তরল পানীয়র উপর আলোকপাত করছি।

দিনে তিনবার সঠিক খাদ্যগ্রহণ হচ্ছে হিটস্ট্রোক প্রতিহত করায় গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সঠিক খাবার খাওয়ার মধ্যে দিয়ে যে তরল পানীয়, লবণ ও পুষ্টি আপনি গ্রহণ করতে পারেন তা মনে রাখবেন। এছাড়া তৃষ্ণার্ত বোধ না করলেও প্রায়শই তরল পানীয় আপনার পান করা উচিত। মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে টয়লেটে আপনি যেতে চান না বলেই ঘুমাতে যাওয়ার আগে তরল পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকা ভাল ধারণা নয়। টয়লেটে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠলে এক কাপ পানি পান করার চেষ্টা আপনি অন্তত করবেন, আরও এক কাপ পান করবেন ঘুম ভাঙ্গার পর।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের ২৭শে জুলাই পর্যন্ত নেয়া।

(৬) কি করা দরকার – ৩ পরিবারের বয়স্ক সদস্য এবং বৃদ্ধ প্রতিবেশীদের উপর নজর রাখা

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। হিটস্ট্রোক নিয়ে আমাদের এই ধারাবাহিকের এবারের পর্বে পরিবারের বয়স্ক সদস্য এবং বৃদ্ধ প্রতিবেশীদের উপর নজর রাখার উপর আলোকপাত করা হচ্ছে।

হিটস্ট্রোকের বেলায় দ্রুত সনাক্তকরণ এবং দ্রুত চিকিৎসা হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের বৃদ্ধ সদস্যদের সাথে আপনি বসবাস না করলে প্রতিদিন তাদের খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করুন। তারা যদি বলেন যে খুব বেশি ক্ষুধা তাদের পাচ্ছেনা কিংবা তারা আলস্য বোধ করছেন, বিশেষ করে সেরকম অবস্থায় সাবধান হবেন। এমনকি সামান্য খারাপ বোধ করলেও তারা যেন ডাক্তারের কাছে যান তা নিশ্চিত করে নেবেন। দ্রুত সাড়া দেয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া একা বসবাস করা বয়স্ক প্রতিবেশী, বৃদ্ধ দম্পতি এবং সন্তানদের সাথে বসবাস করা বৃদ্ধ অভিভাবকদের দিকেও আপনার হয়তো নজর রাখা দরকার।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের ২৮শে জুলাই পর্যন্ত নেয়া।

(৭) ফার্স্ট এইড বা প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। হিটস্ট্রোক নিয়ে আমাদের চলতি ধারাবাহিকের শেষ পর্বে হিটস্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা বা ফার্স্ট এইড সম্পর্কে বলা হবে। পরিবারের কোন সদস্য বা প্রতিবেশীর হিটস্ট্রোক হলে এই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। তবে সেই ব্যক্তির যদি সংজ্ঞা হারানোর মত গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

এখানে জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের কথা বলা হচ্ছে।
১) রোগীকে ঠান্ডা ঘরে অথবা ছায়া আছে এমন জায়গায় শুইয়ে দিতে হবে।

২) রোগীর পা দুটো একটু উঁচু করে রাখতে হবে। পায়ে মোজা পরা থাকলে, তা খুলে দিতে হবে। জামাকাপড় একটু আলগা করে দিতে হবে।

৩) রোগীর শরীর ঠান্ডা করতে হবে পাখার বাতাস দিয়ে এবং বরফের প্যাক বা ভিজে তোয়ালে শরীরের ওপরে রেখে। শরীর ঠান্ডা করার কার্যকর উপায় হলো যেসব জায়গায় ত্বকের ঠিক নিচ দিয়ে প্রধান প্রধান শিরাগুলো গিয়েছে, সেখানে বরফ দেওয়া। যেমন, ঘাড়ের পিছনে, বগলের তলায়, অথবা কুঁচকিতে।

৪) রোগীকে লবণ মেশানো জল পান করতে দিন। রোগী তার নিজস্ব গতিতে একটু একটু করে পান করবেন। তাগাদা দেওয়া বা জোর করা উচিত নয়। গলায় আটকে গেলে, রোগীর নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে।

৫) রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।

তেইকিও বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের অগ্রসর জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক মিইয়াকে ইয়াসুফুমি’র তত্ত্বাবধানে হিটস্ট্রোক সংক্রান্ত এই ধারাবাহিকটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের ২৯শে জুলাই পর্যন্ত নেয়া।