দুর্যোগ প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত করার মাধ্যমে দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ

(১) “রোলিং স্টক” পদ্ধতি’র গুরুত্ব

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে একটি আবশ্যকীয় পদক্ষেপ হলো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত করা। এই প্রয়োজনীয়তার কথা জানা থাকলেও অনেকেই হয়তো ভেবে পান না ঠিক কী ধরনের জিনিস মজুত করবেন এবং কী পরিমাণে। আমাদের নতুন ধারাবাহিকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করার বিষয়ে আলোকপাত করা হবে: দুর্যোগের কথা ভেবে কোন্‌ কোন্‌ জিনিস মজুত করা উচিত, কাজটা সহজে অথচ সুদক্ষভাবে করার উপায় কী, এসব নিয়ে আলোচনা করা হবে।

জরুরি অবস্থার জন্য জিনিসপত্র মজুত করার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে জাপানিরা যাকে “রোলিং স্টক” বলে অভিহিত করেন, সেই পদ্ধতিটি অনুসরণের সুপারিশ করে আসছেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা।

এই ব্যবস্থায় যেসব পানীয় এবং খাবার-দাবার অপেক্ষাকৃত বেশি দিন পর্যন্ত ভাল থাকে সেগুলো এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়মিত মজুত করার কথা বলা হয়। তাছাড়া ভাল থাকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার সময় এগিয়ে আসছে যেসব জিনিসের সেগুলো ব্যবহার করে ফেলতে এবং পরিবর্তে নতুন জিনিস কিনে রাখতে বলা হয়।

মজুত করা দরকার যেসব জিনিস, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে পানি ও খাবার-দাবার।

জরুরি অবস্থার কথা ভেবে অত্যাবশ্যক জিনিস অন্তত তিন দিন চলার মত পরিমাণে মজুত করা উচিত। তবে সুপারিশ করা হয় এক সপ্তাহ চলার মত পরিমাণ মজুত করতে।

এক সপ্তাহের মত পানি, খাবার-দাবার ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করা সহজ নয়। তবে “রোলিং স্টক” পদ্ধতিতে হিসেব করে নেওয়া যায় কোন্‌ জিনিস কত পরিমাণে লাগতে পারে।

পানির কথা যদি বলি, পান করা ও রান্নার জন্য সাধারণত একজন লোকের দৈনিক ৩ লিটার করে পানি লাগে। মাথাপিছু অন্তত তিন দিনের মত পানি প্রস্তুত রাখা উচিত।

এর অর্থ, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য মজুত রাখার পানির পরিমাণ হিসেব করার সময় মাথাপিছু পানির পরিমাণ তিন লিটারকে ব্যক্তির সংখ্যা দুই দিয়ে গুন করে, সেই গুনফলকে দিনের সংখ্যা তিন দিয়ে গুন করলে দেখা যাবে অন্তত ১৮ লিটার পানি প্রস্তুত রাখা সমীচীন।

মজুত পানির এই পরিমাণের মধ্যে চা এবং কোমল পানীয় সহ অন্যান্য পানীয় অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

সম্প্রতি জাপানে পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত ভাল থাকে এমন পানি জাতীয় পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। মজুত করার সময় সাধারণ বোতলজাত পানির সাথে এই পণ্যগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(২) কোন খাবারগুলো মজুত করতে হবে?

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত হতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত করা অপরিহার্য। আমাদের সর্বশেষ এই ধারাবাহিকে অপেক্ষাকৃত সহজে জরুরি সরবরাহ মজুত করে রাখার জন্য কিছু দরকারি পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

এই পর্বে, আপনার ঠিক কোন খাবারগুলো মজুত করে রাখা উচিত, তার উপর আমরা আলোকপাত করব। পর্যাপ্ত পরিমাণ নিশ্চিত করার জন্য আপনি সাধারণত যা খাবেন, তা জরুরি মজুতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা পরামর্শ দিব। যাই হোক, জরুরি সময়ে রান্না করা সম্ভবত কঠিন হতে পারে, তাই আপনি আগুন ব্যবহার না করেই রান্না করতে পারবেন, এরকম বিশেষ কিছু খাদ্যসামগ্রী অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেয়া হয়।

সর্বাধিক পরামর্শ দেয়া দৈনিক খাবার হচ্ছে ইনস্ট্যান্ট বা শুকনো নুডলস, আগে থেকে রান্না করা ভাত ও প্যাকেটের কারি বা রান্না করা মাংসের মত বিশেষ প্যাকেটজাত খাবার। এর পাশাপাশি রয়েছে টিনজাত খাবার, সবজির রস এবং তুলনামূলকভাবে দীর্ঘস্থায়ী হওয়া নানারকম ফল।

জরুরি খাবার উপাদানের মধ্যে জাপানে “আলফা-মাই” নামে পরিচিত শুধুমাত্র পানি ঢেলে খেতে পারার মত শুকনো ভাত, গরম করার যন্ত্র যুক্ত জরুরি খাবারের প্যাকেট, শুকনো রুটি এবং বিস্কিটের মত হালকা খাবার মজুত করে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

জরুরি পরিস্থিতিতে লোকজনের মধ্যে উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের প্রবণতা থাকে। সেকারণে, টিনজাত খাবার এবং সবজির রস প্রস্তুত করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে আপনি মাংস, মাছ এবং সবজি থেকে অন্যান্য পুষ্টি গ্রহণ করতে পারেন।

এটিও বিবেচনায় রাখা উচিত যে দুর্যোগের সময় দুধ, শিশুদের খাবার এবং এলার্জি মুক্ত খাবার পাওয়া কঠিন। তাই শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ ও এলার্জিতে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে এই ধরনের খাবার মজুত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যানুযায়ী, একটি বড় ধরনের দুর্যোগের পরে সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে বলে দুই সপ্তাহ চলার মত খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণ করা বাঞ্ছনীয়।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের মে মাসের ২ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৩) পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য নেয়া প্রস্তুতি

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত হতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত করা অপরিহার্য। আমাদের সর্বশেষ এই ধারাবাহিকে অপেক্ষাকৃত সহজে জরুরি সরবরাহ মজুত করে রাখার জন্য কিছু দরকারি পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

এই পর্বে, আমরা পানির দিকে নজর দেব। যখন একটি দুর্যোগ আঘাত হানে, তখন পানির সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যখন ঠিক এরকমটা ঘটবে, তখন আমরা এমনকি টয়লেটও ফ্লাশ করতে পারব না। তাই কেবল পান করার জন্য ও রান্নার জন্য পানি মজুত না করে, বরং দৈনন্দিন অন্যান্য ব্যবহারের জন্যও পানি মজুত করার প্রয়োজন রয়েছে। একটা উপায় হচ্ছে, বাথটাবের পানি ব্যবহারের পর ফেলে না দিয়ে সেভাবেই জমিয়ে রাখা। কিন্তু ছোট শিশু থাকা পরিবারগুলোকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, কেননা একটি ছোট শিশু দুর্ঘটনাবশত বাথটাবের মধ্যে পড়ে গিয়ে ডুবে যেতে পারে।

এছাড়াও, পানি ব্যবহার করতে হয় না এমন জরুরি টয়লেট কিট, পানি ছাড়া চুল ধুতে পারা শ্যাম্পু, ভিজা টিস্যু এবং খাবার মুড়ে রাখার প্লাস্টিকের র‍্যাপিং পেপারের মত কিছু আইটেম মজুত করে রাখার পরামর্শ আপনাদের দেয়া হচ্ছে। এই প্লাস্টিকের র‍্যাপিং পেপার দিয়ে থালাবাটি মুড়ে রাখলে সেগুলো পরিস্কার থাকবে, তাই আপনার এগুলো ধোয়ার জন্য পানি ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে না।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের মে মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৪) বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য নেয়া প্রস্তুতি

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত হতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত করা অপরিহার্য। আমাদের সর্বশেষ এই ধারাবাহিকে অপেক্ষাকৃত সহজে জরুরি সরবরাহ মজুত করে রাখার জন্য কিছু দরকারি পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

এই পর্বে, আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে নেয়া পদক্ষেপের উপর আলোকপাত করবো। বিদ্যুৎ না থাকার অর্থ হচ্ছে আলো না থাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ ছাড়া আপনি টেলিভিশন চালু করতে পারেন না কিংবা আপনার স্মার্ট ফোন আপনি ব্যবহার করতে পারেন না বলে তথ্য সংগ্রহ কঠিন হয়ে উঠে।

আলো জ্বালানোর কয়েকটি যন্ত্রপাতি, যেমন ছোট আকারের টর্চ লাইট, মাথায় যুক্ত রাখা যায় এমন বাতি, গলায় ঝুলিয়ে রাখার মতো বাতি এবং বাড়ির ভেতরে ব্যবহার করার জন্য বড় আকারের টর্চ লাইট – এরকম বেশ কিছু যন্ত্রপাতি তৈরি রাখুন। এলইডি ফ্ল্যাশ লাইট ও বাতি একারণে বেশি যুতসই যে দীর্ঘ সময় ধরে অন্য কোথাও সরে যাওয়ার সময় সাধারণ আলো ছড়ানো বাল্বের চাইতে বেশি সময় ধরে এগুলো কাজ করে।

তথ্য সংগ্রহের উপায় হিসেবে একই সাথে বহনযোগ্য রেডিও এবং ড্রাই সেল ব্যাটারি বা সৌর শক্তিতে কাজ করা স্মার্ট ফোন চার্জারও সাথে রাখুন।

বড় ধরনের দুর্যোগের সময় মৌলিক পরিষেবার মধ্যে গ্যাসের সরবরাহ ফিরে আসতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে বলে বলা হয়। ফলে গরম খাবার প্রস্তুত করতে যা আপনাকে সাহায্য করবে, সেরকম বহনযোগ্য স্টোভ বা চুলা এবং রান্নার অন্যান্য সামগ্রী তৈরি রাখা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। রান্নার কাজে বহনযোগ্য গ্যাসের চুলা ব্যবহার করার সময় প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য প্রতি সপ্তাহে প্রায় ছয়টি করে সিলিন্ডার আপনার দরকার হবে।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের মে মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৫) দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত অন্যান্য কয়েকটি জিনিস

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত হতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত করা অপরিহার্য। আমাদের সর্বশেষ এই ধারাবাহিকে অপেক্ষাকৃত সহজে জরুরি সরবরাহ মজুত করে রাখার জন্য কিছু দরকারি পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

এই পর্বে, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত কয়েকটি জিনিসের উপর আমরা আলোকপাত করব, যেগুলো আশ্রয় কেন্দ্রে বেশ কয়েক দিন থাকতে হলে কাজে লাগবে।

আমরা পরামর্শ দেব যে আপনারা নিয়মিত ভাবে নিম্নলিখিত এই জিনিসগুলোর অতিরিক্ত সরবরাহ আপনাদের জরুরি ব্যাগে মজুত করবেন, বিশেষ করে যে জিনিসগুলো অন্য লোকের সাথে ভাগ করে নেয়া কঠিন।

– টুথ ব্রাশ, মাউথওয়াশ
– চশমা, কনট্যাক্ট লেন্স এবং লেন্স পরিষ্কার করার সলিউশন
– ভ্রাম্যমাণ টয়লেট, টয়লেট পেপার, নারীদের স্যানিটারি পণ্য
– মোজা (দীর্ঘক্ষণ একই স্থানে বসে থাকার কারণে দেখা দেয়া রোগ
যা ইকোনমি ক্লাস সিনড্রোম হিসাবে পরিচিত তা প্রতিরোধেও সাহায্য করে)
– চোখ ঢাকার মাস্ক, ইয়ার প্লাগ
– ময়লা ফেলার জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগ (রেইনকোট এবং টয়লেট হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে)
– ব্যবহার করে ফেলে দেয়া যায় এমন পায়ে পরার চটি
– কাগজের পাখা, ঠাণ্ডা তোয়ালে (গরমের সময়ের জন্য)
– হাতে পরার গ্লাভস, শরীর গরম রাখার প্যাক (শীতকালের জন্য)

সবকিছু একসাথে প্রস্তুত করা কঠিন হতে পারে তবে এটা মনে রাখবেন যে দুর্যোগ যে কোন সময় আঘাত হানতে পারে। নিয়মিত ভাবে অতিরিক্ত মাত্রায় এই জিনিসগুলোর সরবরাহ রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের মে মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।