দুর্যোগ প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর

“ফেইজ-ফ্রি”: স্বাভাবিক এবং জরুরি সময়ের মধ্যকার সীমানা ভেঙ্গে ফেলা

(১) “ফেইজ-ফ্রি” কী?

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। “ফেইজ-ফ্রি” ধারণার উপর ভিত্তি করে আজকাল অসংখ্য নতুন পণ্য এবং স্থাপনার উন্নয়ন করা হচ্ছে। ধারণাটি হচ্ছে, স্বাভাবিক সময় এবং জরুরি সময়ের মধ্যকার সীমানাকে ভেঙ্গে ফেলে জরুরি সরবরাহ হিসেবে দৈনন্দিন পণ্যকে ব্যবহার করা। আমাদের এই ধারাবাহিকে, আমরা এই ধারণা এবং এই সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্যোগের দিকে নজর দেব।

“ফেইজ-ফ্রি”র ধারণা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান হারে সবার নজর আকর্ষণ করে চলেছে।

এরকমই একটি বৈশিষ্ট্যসূচক উদাহরণ হচ্ছে “রোলিং স্টক”। এটি হলো দৈনন্দিন ভিত্তিতে ব্যবহার করার পাশাপাশি দুর্যোগকালীন জরুরি খাদ্য সরবরাহ হিসেবেও ব্যবহার করার জন্য খাদ্য এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সামান্য বেশি পরিমাণে কেনা।

এরকম আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে “আউটডোর গিয়ার” যেটি পর্বতারোহণের সময় বা ক্যাম্পিংয়ের সময়ে ব্যবহার করা হয়। এধরনের গিয়ারকে “ফেইজ-ফ্রি” হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, কেননা এটি যেখানে বিদ্যুৎ বা গ্যাস নেই সেখানেও ব্যবহার করা যায়।

বেসরকারি একটি কোম্পানির চালানো এক জরিপে দেখা গেছে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখতে জাপানের প্রায় ৪০% পরিবারে আদৌ কোনরকম খাদ্য মজুদ থাকে না।

ইয়ামানাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হাদা ইয়াসুনোরি জোর দিয়ে বলেন যে, একইসাথে দুর্যোগের সময়ও ব্যবহার করতে পারার মত করে দৈনন্দিন পণ্যের পরিকল্পনা করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের জুন মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(২) “রোলিং স্টক” নিয়ে দুর্যোগের প্রস্তুতি গ্রহণ

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। “ফেইজ-ফ্রি” ধারণার উপর ভিত্তি করে আজকাল অসংখ্য নতুন পণ্য এবং স্থাপনার উন্নয়ন করা হচ্ছে। আজ আমরা “রোলিং স্টক” বলতে কী বুঝায় এবিষয়ে নজর দেব।

২০১৬ সালের কুমামোতো ভূমিকম্পের সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অধিবাসীদের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ ফিরে আসার জন্য ১৫ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। বড় ধরণের দুর্যোগের প্রস্তুতি নিয়ে রাখার জন্য জাপান সরকার লোকজনের প্রতি এক সপ্তাহের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত রাখার সুপারিশ করছে। তবে এতটা বেশি পরিমাণ সরবরাহ মজুত রাখা সহজ বিষয় নয়। এতে করে কিছু পণ্যের মেয়াদ জানার আগেই তা উত্তীর্ণ হয়ে যেতে পারে। তাই এরকম অবস্থা এড়িয়ে যেতে “রোলিং স্টক” ধারণাটি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

আপনি এবং আপনার পরিবারের সদস্যরা কেনাকাটা করতে যাওয়ার সময় যে খাবার কিনে থাকেন, তার সাথে সামান্য অতিরিক্ত পরিমান খাবার ক্রয় এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। সাধারণত, দ্রুত মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া খাবার আপনারা আগে খেয়ে নেন এবং পরবর্তীতে নতুন খাদ্যসামগ্রী দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তা আপনারা পূরণ করে নেন। অন্যভাবে বলতে গেলে “রোলিং স্টক” প্রক্রিয়ায় খাদ্য কেনা, মজুত রাখা এবং ব্যবহার করার চক্রের পুনরাবৃত্তি আপনি করে থাকেন।

আপনি যা জমা করে রাখছেন, দৈনিক ভিত্তিতে তা ব্যবহার করার মধ্যে দিয়েও সহজেই আপনি পর্যাপ্ত মজুত বজায় রাখতে পারবেন। পানি ও প্রধান খাদ্যপণ্য ছাড়াও সবজি এবং ফলের মজুত সবসময় যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে সেটি নিশ্চিত করে নিন। এটা করা দরকার, কারণ দুর্যোগের সময় ভিটামিন ও মিনারেল বা খনিজ পদার্থ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। একটি বড় ধরণের দুর্যোগ আঘাত হানার পর এরকম সাহায্য এসে পৌঁছানোর জন্য কতটা সময় অপেক্ষা করতে হবে সেটি সুনির্দিষ্ট করে বলার কোনো উপায় এই মুহুর্তে নেই। সুতরাং, এক সপ্তাহের জন্য আপনি যেন বেঁচে থাকতে পারেন সেটি নিশ্চিত করে নেয়ার একটি কার্যকর উপায় হলো “রোলিং স্টক”।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের জুন মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৩) দুর্যোগকালীন মজুদের বিবেচ্য বিষয়সমূহ

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। “ফেইজ-ফ্রি” ধারণার উপর ভিত্তি করে আজকাল অসংখ্য নতুন পণ্য এবং স্থাপনার উন্নয়ন করা হচ্ছে। ধারাবাহিকের তৃতীয় পর্বে আমরা দুর্যোগের কথা ভেবে মজুত করার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে তার উপর নজর দেব।

২০১৯ সালে চিবা জেলায় একটি তাইফুন বা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় দমকা বাতাসের ফলে বিদ্যুৎ খুঁটির অনেকগুলোই উপড়ে গিয়েছিল। এর ফলে ৬ লাখ ৪০ হাজার বাড়িঘরে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেয়। সংযোগ চালু না হওয়া পর্যন্ত এলাকায় বসবাসকারীদের বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ ছাড়াই জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল।

তবে পরবর্তীতে এটা জানা যায় যে, দুর্যোগের প্রস্তুতি হিসাবে জেলা সরকার কর্তৃক মজুত রাখা আড়াইশোটি জেনারেটরের মধ্যে অর্ধেকই তখন ব্যবহার করা হয়নি। জেলা সরকার পৌরসভাগুলোর অনুরোধে জরুরি সময়ে এই জেনারেটরগুলো লিজ দেয়ার জন্য মজুত রাখলেও স্থানীয় সরকার এবিষয়ে অবগত ছিল না।

একই রকম ঘটনা শিযুওকা জেলাতেও ঘটেছে। ২০২২ সালে এক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের ফলে এখানে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। এর ফলে প্রায় দুই সপ্তাহের জন্য ৬৩ হাজারের মত বাড়িঘরে পানি সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাসীন্দাদের জন্য পানি সরবরাহকারী ট্রাকের ব্যবস্থা করা হলেও পরবর্তীতে এটা জানা যায় যে, জরুরি সময়ের কথা ভেবে প্রস্তুত করে রাখা একটি ট্যাঙ্কের পানি ব্যবহার করা হয়নি। কারণ বাসীন্দারা এবিষয়ে অবগত ছিলেন না।

এসব ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, জরুরি সময়ের কথা ভেবে স্থানীয় পর্যায়ে মজুত রাখা স্থাপনা এবং যন্ত্রপাতির বিষয়ে লোকজন অবগত না থাকলে, সেগুলো কোন কাজেই আসে না।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের জুন মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৪) বিক্রির জন্য রাখা খাদ্যপণ্য আশ্রয়গ্রহণকারীর খাদ্য

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। “ফেইজ-ফ্রি” ধারণার উপর ভিত্তি করে আজকাল অসংখ্য নতুন পণ্য এবং স্থাপনার উন্নয়ন করা হচ্ছে। আজ আমরা তোকুশিমা জেলার এক পর্যটন কেন্দ্রের অভিনব উপায়ে খাদ্যবস্তু মজুদ করা সম্পর্কে জানব।

জরুরি অবস্থার কথা ভেবে যে খাবার মজুদ করা হয়, সেগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে যাবার আগেই পুনরায় মজুদ করার কাজটি বেশ কষ্টকর। কোনো কোনো সময় জিনিসগুলো ব্যবহার না করেই ফেলে দিতে হয়। তবে মজুদ খাবারসামগ্রী যদি নিয়মিত পুনস্থাপন করা হয় এবং সর্বদাই ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা যায়, সেক্ষেত্রে দুর্যোগের সময় এগুলো কাজে লাগানো সহজ হয়।

তোকুশিমা জেলার “কুরুকুরু নারুতো” নামের রাস্তার পার্শ্ববর্তী পর্যটন বিপণী কেন্দ্রটি হচ্ছে এমন এক দৃষ্টান্ত যেখানে একটি অভিনব ব্যবস্থা চালু রয়েছে। কেন্দ্রটি খোলা হয় ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে। তারপর থেকে বহু লোক এখানে আসছেন স্থানীয় বিশেষ খাবারসামগ্রী এবং টাটকা সীফুড কেনার আকর্ষণে। এই বিপণী কেন্দ্রের বিক্রির জন্য রাখা খাদ্যসামগ্রী জরুরি অবস্থা দেখা দিলে দুর্যোগ কবলিত লোকজনকে খাওয়ানোর জন্য ব্যবহার করা হবে। কেন্দ্রটি “ফেইজ-ফ্রি” ধারণাটি গ্রহণ করেছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে পচনশীল খাবার বাদ দিয়ে অন্য খাবারসামগ্রী অধিক পরিমাণে জমা করে রাখছে।

প্রায় ১ হাজার লোককে তিন দিন ধরে খাওয়ানোর মতো যথেষ্ট খাবারসামগ্রীর মজুদ এই বিপণী কেন্দ্রের রয়েছে।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের জুন মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৫) নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করতে পারার মতো আকর্ষণীয় স্থাপনা প্রস্তুত করা।

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। “ফেইজ-ফ্রি” ধারণার উপর ভিত্তি করে আজকাল অসংখ্য নতুন পণ্য এবং স্থাপনার উন্নয়ন করা হচ্ছে। আজ আমরা একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থাপনার উপর আলোকপাত করব, যেটি দুর্যোগের সময় একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তোকুশিমা জেলার একটি পর্যটন স্থাপনার ছাদের পার্ক, ৎসুনামি আঘাত হানলে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়িঘর ছেড়ে আসা লোকজনকে যাতে গ্রহণ করতে পারে সেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের অদূরে অবস্থিত নানকাই খাদ বরাবর একটি মহাভূমিকম্প আঘাত হানলে, উপকূলের প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত স্থাপনাটিতে পানির স্তর তিন মিটার উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়৷

ব্যবসায়িক লেনদেনের সময়সীমা যাই হোক না কেন, এই স্থাপনার ছাদের স্থানটি সর্বসাধারণের জন্য দিনরাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে।

ছাদে পৌঁছানোর জন্য একটি ঘাসযুক্ত ঢাল যুক্ত করা হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে লোকজন এই ঢাল দিয়ে নিচে নেমে আসা উপভোগ করতে পারেন, তবে, জরুরি পরিস্থিতিতে এটিকে যানবাহন ওঠার পথ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

মানুষকে নিয়মিত অবসর সময় কাটাতে আকর্ষণ করার লক্ষ্য নিয়ে পার্কটি তৈরি করা হয়েছে। আকর্ষণীয়ভাবে ডিজাইন করা খেলার মাঠের সরঞ্জাম এবং কৃত্রিম বস্তুগুলোও নান্দনিক। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশা করছে যে, লোকজন স্থানটির সাথে পরিচিত হবেন এবং দুর্যোগের ক্ষেত্রে তারা যে এখানে এসে আশ্রয় নিতে পারবেন, সে বিষয়ে সচেতন থাকবেন।

সারা জাপান জুড়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো অনুরূপ পর্যটন স্থাপনা পরিচালনা করছে। ২০১১ সালে উত্তর-পূর্ব জাপানে আঘাত হানা মহাভূমিকম্প এবং তৎপরবর্তী ৎসুনামির পরে এগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সহায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কারণ এগুলোতে রয়েছে প্রশস্ত পার্কিয়ের স্থান, পানি, খাবার সরবরাহ এবং শৌচাগারের ব্যবস্থা। দুর্যোগের সময়ে আরও ব্যবহার বান্ধব করার জন্য এই স্থাপনাসমূহে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে নেয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের জুন মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৬) “ফেইজ-ফ্রি” হোটেল পরিচালনা

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। “ফেইজ-ফ্রি” ধারণার উপর ভিত্তি করে আজকাল অসংখ্য নতুন পণ্য এবং স্থাপনার উন্নয়ন করা হচ্ছে। আজ আমরা একটি হোটেলের দিকে নজর দেব, যেটি আবাসন সুবিধা ছাড়াও অন্যান্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।

চিবা জেলার এই হোটেলটি যারা গাড়িতে চড়ে ব্যবসায়িক কারণে এই এলাকায় আসেন তাদের বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। কিন্তু যখন দুর্যোগ আঘাত গানে, তখন হোটেলের কক্ষগুলোকে উপদ্রুত এলাকায় পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া যায়। সেখানে কক্ষগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রের ঘর বা সাময়িক ক্লিনিক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

কক্ষটি একটি ডেস্ক এবং একটি মডুলার বাথরুম দিয়ে সজ্জিত, ঠিক একটি নিয়মিত, বাণিজ্যিক হোটেল রুমের মতো। কিন্তু এই কক্ষগুলো অন্যত্র পরিবহন করে নিয়ে যাওয়ার মত করে তৈরি করা হয়েছে এবং এগুলোর নিচে চাকা লাগানো থাকে, ঠিক যেন একটি ট্রেইলার হাউজ। একটি ট্রাকের সাথে সংযুক্ত থাকলে কক্ষগুলিকে সহজেই যে কোনও জায়গায় টেনে নেওয়া যেতে পারে।

এই হোটেলটির পরিচালনা করা কোম্পানিটি কন্টেইনার ইউনিট তৈরি করে থাকে এবং এইসব কন্টেইনার ব্যবহার করে মজুদাগার সেবা প্রদান করে থাকে।

২০১১ সালের ভূমিকম্প এবং ৎসুনামি দুর্যোগের পরে, এই হোটেলের ম্যানেজার দেখেছেন আশ্রয়গ্রহণকারীদের থাকার জায়গাগুলোতে কতখানি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ঘাটতি হয়েছে। ম্যানেজার এইসব কন্টেইনার ইউনিট ব্যবহার করে আশ্রয়গ্রহণকারীদের জন্য সাময়িক থাকার জায়গার ব্যবস্থা করেন। আর এই বিষয়টিই এই কোম্পানিকে হোটেল ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করে।

বর্তমানে কোম্পানিটি সারা জাপানের ৬০টি স্থানে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার মত কন্টেইনার হোটেল চালাচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারির সময়, কোম্পানিটি স্থানীয় সরকারকে পিসিআর পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে বা চিকিৎসা কর্মীদের বিশ্রামের কক্ষ হিসেবে ব্যবহারের জন্য কন্টেইনার হোটেলগুলো ভাড়া দিয়েছে। কোম্পানিটি সারা দেশের ১০৮টি স্থানীয় সরকারের সাথে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দুর্যোগের সময় কন্টেইনার ইউনিটগুলো ভাড়া দেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের জুন মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৭) “ফেইজ-ফ্রি” জরুরি প্রাণরক্ষার সামগ্রী।

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। “ফেইজ-ফ্রি” ধারণার উপর ভিত্তি করে আজকাল অসংখ্য নতুন পণ্য এবং স্থাপনার উন্নয়ন করা হচ্ছে। আজ আমরা জরুরি প্রাণরক্ষার বিভিন্ন পণ্যের দিকে নজর দেব, যেগুলো “ফেইজ-ফ্রি” ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এরকম নানারকম “ফেইজ-ফ্রি” পণ্যের উন্নয়ন করা হচ্ছে।

উদাহরণ স্বরূপ, মাল্টি-পারপাজ কাগজের কাপে পরিমাণ চিহ্ন লেখা থাকে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার সময় এই কাপ ওষুধ সেবন করা এবং শিশু সন্তানের জন্য গুড়ো দুধ প্রস্তুত করে নিতে মায়েদের জন্য উপকারী হিসেবে বিবেচিত হবে।

অন্যান্য পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে বল পয়েন্ট কলম, যেখানে কলমগুলোর রিফিলের ভিতরে চাপযুক্ত কালি ব্যবহার করা হয়। ফলে এই কলমকে উল্টে বা স্যাঁতসেঁতে কাগজে লেখার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

আরেকটি পণ্য হচ্ছে ব্যাকপ্যাক, কাঁধে সংযোগের বাকলে এগুলোতে একটি হুইসেল বা বাঁশি ইতোমধ্যে সংযুক্ত করা আছে। জরুরী অবস্থার সময় এই হুইসেলের শব্দ অনেক দূর পর্যন্ত শুনতে পাওয়ার মত যথেষ্ট জোরালো।

সবশেষে আছে জিনিসপত্র পেচিয়ে নেয়ার ফুরোশিকি কাপড়, দুর্যোগের সময় যেটা খুবই উপকারী। বর্গাকার এই কাপড় মূল্যবানসামগ্রী বহন করার জন্য বাহুতে ঝুলিয়ে রাখার থলের মত করে ভাঁজ করে নেয়া যায়। এছাড়া বাতাসে ধুলা ছড়িয়ে পড়ার সময় মাথা এবং মুখ রক্ষা করার কাপড় হিসাবেও এটা আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। শিশুদের জন্য দোলনা হিসাবে এটা ব্যবহার করা যায় কিংবা মেঝে ঠাণ্ডা থাকলে মাদুর হিসাবে এটা বিছিয়ে নেয়া সম্ভব। এটা খুব হালকা এবং স্থুলাকারের না হওয়ায় মানুষের উচিত হবে সবসময় এটা সাথে বহন করা।

এসব পণ্য কেবল দুর্যোগের সময় ব্যবহার করার জন্য রেখে দেয়া উচিত হবে না। বরং প্রতিদিনের কাজে এগুলোকে ব্যবহার করা হলে দুর্যোগের সময় খুব সহজেই তাৎক্ষণিকভাবে এগুলো কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের জুন মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৮) স্কুলে “ফেইজ-ফ্রি” ক্লাস

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। “ফেইজ-ফ্রি” ধারণার উপর ভিত্তি করে আজকাল অসংখ্য নতুন পণ্য এবং স্থাপনার উন্নয়ন করা হচ্ছে। আজ আমরা “ফেইজ-ফ্রি” ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি শিশুদের ক্লাসের দিকে নজর দেব।

জাপানের কিছু স্কুল “ফেইজ-ফ্রি” ধারণাটি ক্লাসে প্রচলন করছে। পশ্চিমের জেলা তোকুশিমার নারুতো শহরের একটি প্রাথমিক স্কুল হল এধরনের একটি স্কুল। এখানকার শিশুরা শরীর চর্চা ক্লাসে ব্যালেন্স বিমের উপর বাধার সৃষ্টি করার লক্ষ্যে রেখে দেয়া লাল বলগুলো এড়িয়ে বিমের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার অনুশীলন করে থাকে। শিক্ষকরা শিশুদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, ভূমিকম্পের সময় বিপজ্জনক কোন কিছুর উপর পড়ে গিয়ে থাকলে বা তার উপর পা রাখলে কী হতে পারে। উত্তরে একজন শিক্ষার্থী বলে যে, “এধরনের কোন কিছুতে পা লেগে গেলে আমার পা কেটে রক্ত বেরুতে পারে”। অপর একজন জানায়, “আমাকে সেটা ব্যাথা দিতে পারে”। এধরনের শিক্ষা থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানলে শিশুদের কী করা উচিত সে বিষয়ে তারা জানতে পারে।

পাটিগণিতের একটি ক্লাসে শিশুরা ৎসুনামির গতির সাথে ধাবমান উটপাখি এবং জিরাফের গতি তুলনা করে দেখে। গণনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জানতে পারে যে প্রতি সেকেন্ডে ১০ মিটার বেগে ৎসুনামি ধেয়ে আসে, যার অর্থ হল ৫০ মিটার এগিয়ে আসতে ঢেউয়ের সময় লাগে মাত্র ৫ সেকেন্ড। এর থেকে শিশুরা বুঝতে পারে যে, ৎসুনামি আঘাত হানার পর নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করা মানে খুব দেরি হয়ে যাওয়া। ৫০ মিটার দৌড়ে যেতে তাদের কত সেকেন্ডের প্রয়োজন তা তারা শরীর চর্চার ক্লাস থেকে জানে। এভাবে ৎসুনামি কত দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসে সে বিষয়ে তাদের মনে একটা ধারণা জন্মায়।

নারুতো শহরের সবকটি কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক এবং জুনিয়র হাই স্কুল তাদের পাঠ্যসূচিতে “ফেইজ-ফ্রি” ধারণা সংযোজন করেছে।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের জুন মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।