দুর্যোগ প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর

জীবন রক্ষায় ১১টি বো’সাই মুখ্য বাক্য

(১) “পুরনো ভূমিকম্প রোধী আদর্শমান”এর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। ২০১৬ সালের ১৪ এবং ১৬ই এপ্রিল দক্ষিণপশ্চিম জাপানের কুমামোতো জেলায় প্রচণ্ড শক্তিশালী কয়েকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পে প্রায় ২ লক্ষ ঘরবাড়ি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এতে দুর্যোগের সাথে সংশ্লিষ্ট মৃত্যু’সহ ২৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা ১১টি মুখ্য বাক্যের মধ্যে দিয়ে কুমামোতো ভূমিকম্পগুলো থেকে লাভ করা শিক্ষার দিকে ফিরে দেখবো। আজ আমরা আলোকপাত করছি পুরনো ভূমিকম্প রোধী আদর্শমানের উপর ভিত্তি করে নির্মিত কাঠামোর উপর।

কুমামোতো জেলার মাশিকি শহরটি দু’বার প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খায়। শূন্য থেকে সাত মাত্রার জাপানি ভূমিকম্প পরিমাপক স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল সাত। এর কেন্দ্রস্থলের ৩০% ভেঙ্গে পড়া ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল পুরনো ভূমিকম্প রোধী আদর্শমানের অধীনে, যেটি ১৯৮১ সালের সংশোধনের আগ পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছিল। এই আদর্শমান আইনের মাধ্যমে এমনভাবে নির্ধারণ করা হয় যার অধীনে সুনির্দিষ্ট মাত্রার ভূমিকম্পের কম্পন সহ্য করতে পারার মত করে কাঠামো নির্মাণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।

এই ভূমিকম্পগুলোতে সরাসরি ৫০ জন নিহত হন। এর মধ্যে চাপা পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিযুওকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উশিইয়ামা মোতোইউকি এইসব মৃত্যু নিয়ে এক সমীক্ষা পরিচালনা করেন। এই সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, কমপক্ষে ১৩ জনকে ১৪ তারিখের প্রথম ভূমিকম্পের পরে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়, তবে তারা আবার বাড়িতে ফিরে আসেন এবং ১৬ তারিখের ভূমিকম্পে নিহত হন।

যদি আপনি পুরনো কাঠের বাড়িতে থাকেন, তাহলে শক্তিশালী একটি ভূমিকম্পের পরে আপনি বাড়িতে ফিরে যাবেন না। আপনাকে অবশ্যই অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে। আপনি ভূমিকম্প রোধক পরীক্ষা চালালে আপনার বাড়ির ভূমিকম্প রোধী ক্ষমতা যাচাই করে দেখতে পারবেন। এই ধরনের পরীক্ষা এবং ভূমিকম্প রোধী সংস্কার সাধনের জন্য অনেক পৌরসভা ভর্তুকির প্রস্তাব দিচ্ছে।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের মে মাসের ২ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(২) গাড়িতে এবং বাড়ির কাছে বাইরে আশ্রয় নিন

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা ১১টি মুখ্য বাক্যের মধ্যে দিয়ে ২০১৬ সালে কুমামোতো জেলায় আঘাত হানা প্রচণ্ড ভূমিকম্প থেকে লাভ করা শিক্ষার দিকে ফিরে দেখবো। আজ আমরা আলোকপাত করছি গাড়িতে এবং বাড়ির বাইরে কাছাকাছি জায়গায় আশ্রয় নেয়ার উপর।

কুমামোতো জেলায় উপর্যুপরি আঘাত হানা ভূমিকম্পে আগের আঘাত এবং মূল আঘাতের পর শক্তিশালী পরবর্তী কম্পন অব্যাহত ছিল। এর ফলে বাড়িঘরের মারত্মক ক্ষতি হয়েছে এবং মানুষ গাড়িতে অথবা বাড়ির কাছের খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিছু লোকজন পরিবার, পোষা জীবজন্তু ও অন্যান্য বিষয়াবলীর সাথে সম্পর্কিত কারণে সারারাত গাড়িতে অবস্থান করা বেছে নেন।

ভূমিকম্পের দুই সপ্তাহ পর এনএইচকে গাড়িতে আশ্রয় নেয়া ১০০ জনের উপর জরিপ চালায় এবং জানতে পারে যে ৬৯ শতাংশ উত্তরদাতা কারণ হিসাবে অব্যাহত পরবর্তী কম্পনের মধ্যে বাড়িতে ফিরে যাওয়া নিয়ে দেখা দেয়া আতঙ্কের উল্লেখ করেছেন এবং ৬৭ শতাংশ উত্তর দিয়েছেন যে তাদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বাড়িতে তারা ফিরে যেতে পারছেন না।

ঘরের বাইরে দীর্ঘায়িত সময় অবস্থান করতে হওয়া, মূলত এটি হচ্ছে কুমামোতো ভূমিকম্পের একটি বৈশিষ্ট। গাড়িতে অবস্থান করা লোকজন পরবর্তীতে একের পর এক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ইকোনমি ক্লাস সিন্ড্রোমসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছেন। এছাড়া কেউ কেউ অসুস্থ্যতা কাটিয়ে উঠতে পারেন নি এবং মারা গেছেন।

এটা আমাদের জন্য অপরিহার্য যে, প্রয়োজনে গাড়িতে কিংবা বাড়ির কাছের খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে -এই রকমটি ধরে নিয়ে সেরকম পরিস্থিতির জন্য দরকারী সামগ্রী প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন ।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের মে মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৩) ইকোনমি ক্লাস সিনড্রোম

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা ১১টি মুখ্য বাক্যের মধ্যে দিয়ে ২০১৬ সালে কুমামোতো জেলায় আঘাত হানা প্রচণ্ড ভূমিকম্প থেকে লাভ করা শিক্ষার দিকে ফিরে দেখবো। আজ আমরা আলোকপাত করছি ভেনাস থ্রম্বসিস নিয়ে, যা ইকোনমি ক্লাস সিনড্রোম নামেও পরিচিত।

দীর্ঘ সময় ধরে একই স্থানে বসে থাকা বা চলাফেরা না করার ফলে ইকোনমি ক্লাস সিনড্রোম দেখা দেয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এই রোগের ফলে রক্ত পায়ে জমাট বেঁধে তা ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছে সেখানে আটকে গেলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়।

এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ ভূমিকম্প প্রথম কুমামোতোয় আঘাত হানার দুই মাস পর ৫১ জনকে এই রোগের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। এদের মধ্যে ৪২ জন নিজেদের গাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। তারা সকলেই নিজেদের গাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে এলে বুকে ব্যাথা বা অস্বস্তি অনুভব করেন।

রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে হাঁটাচলা বা হালকা ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে পায়ের ম্যাসাজ করতে হবে এবং ঘন ঘন জল পান করতে হবে। কমপ্রেশন মোজা পরাটাও এক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।

গাড়িতে ঘুমানোর সময় “কার্ডবোর্ডের বিছানা” বানিয়ে নিতে পারেন। গাড়ির আসনকে পিছনে ঠেলে হেলান দেয়া অবস্থায় করে নিয়ে যেসব জায়গায় অসমতা বা ফাঁক দেখা যাবে সেখানে কার্ডবোর্ড লাগিয়ে নিলে আপনি সোজা হয়ে পা ছড়িয়ে শুতে পারবেন।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের মে মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৪) স্ফিয়ার স্ট্যান্ডার্ডস

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা ১১টি মুখ্য বাক্যের মধ্যে দিয়ে ২০১৬ সালে কুমামোতো জেলায় আঘাত হানা প্রচণ্ড ভূমিকম্প থেকে লাভ করা শিক্ষার দিকে ফিরে দেখবো। আজ আমরা আলোকপাত করছি জরুরি আশ্রয়সহ মানবিক সহায়তা প্রদানকালীন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদন্ড নিয়ে।

কুমামোতো ভূমিকম্পের দুই বছর পর এনএইচকে ২১১ জন ব্যক্তি সম্পর্কে সমীক্ষা চালায় যারা সরাসরি ভূমিকম্পের আঘাতে মারা গিয়েছেন তা নয়, বরং এই ব্যক্তিরা ভূমিকম্পজনিত স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও অন্যান্য কারণে পরবর্তীতে মারা যান।

পৌরসভাগুলির দেওয়া তথ্যে জানা যায়, এই ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৯৫ জন ভূমিকম্পের পরে আশ্রয় কেন্দ্রে অথবা নিজেদের গাড়ির ভেতরে ঘুমাতে বাধ্য হয়েছিলেন। কুমামোতোর ভূমিকম্পে প্রাণে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতে উপচেপড়া ভিড় ছিল এবং লোকজনকে ঘুমাতে হয়েছে ঘিঞ্জি পরিবেশে, পাশাপাশি অল্প ব্যবধানে। তারা এই পরিবেশকে নরকের সাথে তুলনা করেন।

সত্যি বলতে কি, জরুরি আশ্রয় কেন্দ্রগুলির মান কীরকম হওয়া উচিত, স্ফিয়ার স্ট্যান্ডার্ডস’এ তাও বলে দেওয়া হয়েছে। ২০ বছরেরও বেশি আগে রোয়ান্ডান শরণার্থী সংকটের পরে রেডক্রস সোসাইটি ও কয়েকটি এনজিও মিলে এই মানদণ্ডটি প্রস্তুত করে।

উদাহরণ স্বরূপ, আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতে থাকার জন্য জনপ্রতি কমপক্ষে সাড়ে তিন বর্গমিটার জায়গা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে স্ফিয়ার স্ট্যান্ডার্ডস’এ। শৌচাগার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, প্রতি ২০ জন লোকের জন্য অন্তত ১টি করে শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকা উচিত এবং একই সাথে, শৌচাগার ব্যবহারে মহিলাদের বেশি সময়ের প্রয়োজন -এই বিষয়টি বুঝানোর জন্য প্রতিটি পুরুষ শৌচাগারের বিপরীতে তিনটি করে মহিলা শৌচাগার থাকতে হবে।

স্ফিয়ার স্ট্যান্ডার্ডস অনুসরণ করে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা উন্নত করতে পারলে, দুর্যোগের সময়ে মানুষের প্রাণরক্ষার পথ সুগম হবে।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের মে মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৫) মিথ্যা গুজব

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা ১১টি মুখ্য বাক্যের মধ্যে দিয়ে ২০১৬ সালে কুমামোতো জেলায় আঘাত হানা প্রচণ্ড ভূমিকম্প থেকে লাভ করা শিক্ষার দিকে ফিরে দেখবো। আর আজ আমরা মিথ্যা গুজবের উপর আলোকপাত করব।

ভূমিকম্পের অব্যবহিত পরই, কুমামোতো শহরের চিড়িয়াখানা থেকে একটি সিংহ পালিয়ে গেছে, এরকম একটি প্রতিবেদন টুইটারে ছড়িয়ে পড়েছিল, যা আশেপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেয়। এই মিথ্যা পোস্টের পরিবেশনকারীকে অবশ্য পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করা হয়। অসত্য বয়ান ছড়িয়ে পড়ার এরকম ঘটনা বহুবারই ঘটেছে, যার ফলে দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সেকিয়া নাওইয়ার ভাষ্যানুযায়ী, তিনটি উপাদানের সংমিশ্রণের কারণে এধরনের মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো হল- একটি অজানা ঘটনার “শঙ্কা”, পরিস্থিতি শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা না যাওয়া সংক্রান্ত “ক্ষোভ” এবং অন্যদের জন্য সহায়ক হতে পারে, এরকম তথ্য অবহিতকরণের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত লোকজনের “ভাল উদ্দেশ্য”।

সেকিয়া উল্লেখ করেন যে, মিথ্যা প্রচারগুলো পরিস্থিতিকে শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। তার ভাষ্যমতে, দুর্যোগকালীন লোকজনের শান্তভাবে এটি নির্ধারণ করা উচিত যে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম’সহ অন্যান্য প্লাটফর্মগুলোতে যে তথ্যগুলো দেখছেন তা সঠিক কিনা। তিনি এটিও গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন যে, লোকজন যেন এসব তথ্যের প্রতি এমন একটি সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন, যা তাদের দ্রুত তথ্যসমূহ অন্যকে পাঠানো বা অবিলম্বে এর ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখবে।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের মে মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৬) ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা ১১টি মুখ্য বাক্যের মধ্যে দিয়ে ২০১৬ সালে কুমামোতো জেলায় আঘাত হানা প্রচণ্ড ভূমিকম্প থেকে লাভ করা শিক্ষার দিকে ফিরে দেখবো। আজ আলোকপাত করবো “ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন” নিয়ে।

কুমামোতো ভূমিকম্পগুলোর সময়, শক্তিশালী প্রথম কম্পনটি আঘাত হানে এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখে, তারপর এমনকি আরও বড় একটি কম্পন এই একই এলাকায় ২৮ ঘণ্টা পরে ১৬ই এপ্রিল আবারো আঘাত হানে। দু’টি শক্তিশালী ভূমিকম্প এত অল্প সময়ের ব্যবধানে আঘাত হানার ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয় ব্যাপক। ফলশ্রুতিতে, প্রথম কম্পনের সময়ে টিকে গেলেও কিছু ভবন দ্বিতীয় কম্পনের সময়ে পুরোপুরি ধ্বসে পড়ে।

পরবর্তীতে, জাপানের আবহাওয়া এজেন্সি ঘোষণা করে যে, প্রথম কম্পনটি ছিল “প্রাক আঘাত” এবং দ্বিতীয়টি ছিল “প্রধান আঘাত”। কুমামোতো ভূমিকম্পের পরে, এজেন্সি একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরে আঘাত হানতে পারে এমন সম্ভাব্য ভূমিকম্পের ব্যাপারে লোকজনকে সতর্ক করে দেয়ার সময় “ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন” এই বাক্যাংশের ব্যবহার বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর কারণ হচ্ছে “ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন” এই বাক্যাংশ এমন অনুভূতির জন্ম দেয় যে, প্রাথমিক ভূমিকম্পের পর দেখা দেয়া কম্পন প্রথম কম্পনের তুলনায় সামান্যই হবে। এর পরিবর্তে, এজেন্সি একটি বড় ধরনের ভূমিকম্পের পরে পরামর্শমূলক সতর্কতা হিসেবে “একই মাত্রার আরও ভূমিকম্প হয়তো এক সপ্তাহের মধ্যে আঘাত হানতে পারে” এমনভাবে তথ্য প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের মে মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৭) হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের সরিয়ে নেয়া

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা ১১টি মুখ্য বাক্যের মধ্যে দিয়ে ২০১৬ সালে কুমামোতো জেলায় আঘাত হানা প্রচণ্ড ভূমিকম্প থেকে লাভ করা শিক্ষার দিকে ফিরে দেখবো। আজ আমরা হাসপাতালের রোগীদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় হওয়া ক্ষতি নিয়ে আলোকপাত করবো ।

কুমামোতোর ভূমিকম্পসমূহে বিভিন্ন হাসপাতালের ভবনসহ জীবন রক্ষার সরবরাহ ব্যবস্থাসমূহের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অনেক রোগীকে জোরপূর্বক অন্য চিকিৎসা কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে হয়েছিল। কুমামোতোর ভূমিকম্পসমূহে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত অন্যত্র সরিয়ে নেয়া মোট ৪৬ জন রোগীর দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট কারণে মৃত্যু হয় বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এসব রোগীদের সকলেই সরিয়ে নেয়া জনিত শারীরিক সমস্যা অথবা হাসপাতালের বিশৃঙ্খলাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন মিইয়াযাকি কারিন, যার বয়স হয়েছিল চার বছর। সে কুমামোতো সিটি হাসপাতালে শয্যাশায়ী ছিল। কম্পন আঘাত হানার সময় কারিন জন্মগত হৃদযন্ত্রের সমস্যাজনিত অস্ত্রোপচারের পর সেখানে নিবিঢ় পরিচর্যায় ছিল এবং তার সম্পূর্ণ বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কম্পনে ভবনের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার পর হাসপাতালটি নিজস্ব কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয় নি। এমতাবস্থায়, কারিনকে ১০০ কিলোমিটার দূরবর্তী ফুকুওকা জেলার একটি হাসপাতালে সরিয়ে নেয়া হয় এবং পাঁচ দিন পর সে মারা যায়।

কুমামোতো ভূকম্পনের সময়, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কুমামোতো সিটি হাসপাতালসহ বহু হাসপাতাল সেখানে ছিল, যারা ভূমিকম্প প্রতিরোধক মানদণ্ড যথাযথভাবে পূরণ করে নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে কাজ করা যেন অব্যাহত রাখা যায়, সেটি নিশ্চিতকরণে কম্পন প্রতিরোধসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানসমূহের কাজ করা উচিত।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের মে মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৮) এস শ্রেণীর সক্রিয় চ্যুতি

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা ১১টি মুখ্য বাক্যের মধ্যে দিয়ে ২০১৬ সালে কুমামোতো জেলায় আঘাত হানা প্রচণ্ড ভূমিকম্প থেকে লাভ করা শিক্ষার দিকে ফিরে দেখবো। আজ আমরা সবচেয়ে বিপদজনক “এস” শ্রেণির সক্রিয় চ্যুতির উপর আলোকপাত করবো ।

ফুতাগাওয়া এবং হিনাগু সক্রিয় চ্যুতি এলাকায় ভূ-চ্যুতির ফলে কুমামোতো ভূমিকম্পসমূহ হয়েছিল। ২০২৩ সালের পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত এখানে ৩১টি সক্রিয় স্থান ছিল যেগুলো জাপানে “এস” হিসাবে শ্রেনীকৃত, যার অর্থ হল ভূমিকম্প সেখানে অতি মাত্রায় আসন্ন।

সক্রিয় চ্যুতি হিসিবে সে সব ফাটলকে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে যেগুলো জাপানের অভ্যন্তরে বা চারিপাশের জলসীমায় অবস্থিত এবং যেখানে উপর্যুপরি ভূ-চ্যুতির কারণে অতীতে বহুবার ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়েছিল বলে ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় নিশ্চিত করা হয়েছে। সক্রিয় চ্যুতির কারণে সৃষ্ট ভূমিকম্পের কেন্দ্র বিন্দু অপেক্ষাকৃত অগভীর স্থানে হয়ে থাকে। সুতরাং দেশের ভিতরে এধরনের কম্পন হলে তা বিরাট পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি বয়ে আনবে যেমনটি কুমামোতো ভূমিকম্পসমূহ এবং ১৯৯৫ সালের হানশিন-আওয়াজি মহাভূমিকম্পের সময় দেখা গিয়েছিল। হিনাগু সক্রিয় চ্যুতির দক্ষিণের অংশ কুমামোতো ভূমিকম্পসমূহের সময় সরে যায়নি এবং এটি “এস” শ্রেণিভুক্ত। বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই স্থানে ভূ-চ্যুতি ঘটতে পারে এবং এর ফলে শূন্য থেকে সাত মাত্রার জাপানি স্কেলে ৭ মাত্রার প্রচণ্ডতায় ভূমিকম্প হতে পারে। ভূমিকম্পের ঠিক পর পরেই কাছাকাছি অবস্থিত ইয়াৎসুশিরোকাই সাগরে ৎসুনামি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই এই এলাকার লোকজনকে এই বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের মে মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৯) মাটির স্তূপ

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা ১১টি মুখ্য বাক্যের মধ্যে দিয়ে ২০১৬ সালে কুমামোতো জেলায় আঘাত হানা প্রচণ্ড ভূমিকম্প থেকে লাভ করা শিক্ষার দিকে ফিরে দেখবো। আজ আমরা উপত্যকা ভরাট করতে অথবা সমতল ভূমি তৈরির জন্য স্তূপ করে রাখা মাটি যে ঝুঁকি বয়ে আনে, সেদিকে আলোকপাত করবো।

কুমামোতো ভূমিকম্পসমূহের পরে জানা যায় যে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ভবনই মাটি দিয়ে ভরাট করা জায়গায় অবস্থিত ছিল অথবা যথেষ্ট শক্ত নয় এমন জমির ভিতের ওপর তৈরি করা হয়েছিল। কোথাও কোথাও মাটির স্তূপ দিয়ে বানানো জমি ধ্বসে যায়। এটি অবশ্য এই অর্থ বহন করে না যে, এধরনের সব জায়গাই বিপজ্জনক। তবে স্তূপীকৃত মাটি থেকে ঝুঁকি সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি এর আগের দুর্যোগগুলিতেও লক্ষ্য করা গিয়েছে।

এছাড়াও অস্থিতিশীল জমিতে কম্পন আরও বেশি জোড়ালো হয়। জমিকে যদি জেলির সাথে তুলনা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে একই মাত্রার কম্পনে শক্ত জেলি যতটা না কম্পিত হয়, তার চেয়ে বেশি আন্দোলিত হয় নরম জেলি। একই ভাবে দুর্বল ভিতের ওপর আঘাত হানা ভূমিকম্পে কম্পনের মাত্রা হয় বেশি, যার পরিণামে ক্ষয়ক্ষতিও হয় বেশি।

বলা হয়ে থাকে ভূমিকম্পে কুমামোতো জেলার মাশিকি শহরের মধ্যাঞ্চলের বিপুল ক্ষতি হওয়ার একটা কারণ হয়তো সেখানকার ভূগর্ভস্থ জমির জটিল ও দুর্বল ভিত।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের মে মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(১০) বিজনেস কন্টিনিউটি প্ল্যান (বিসিপি)

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা ১১টি মুখ্য বাক্যের মধ্যে দিয়ে ২০১৬ সালে কুমামোতো জেলায় আঘাত হানা প্রচণ্ড ভূমিকম্প থেকে লাভ করা শিক্ষার দিকে ফিরে দেখবো। আর আজ আমরা বিসিপি নামে পরিচিত “বিজনেস কন্টিনিউটি প্ল্যান” বা ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা রক্ষা পরিকল্পনার উপর আলোকপাত করবো।

কুমামোতোয় আঘাত হানা ভূমিকম্পগুলোর কারণে সনি কোম্পানি’র সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান’সহ বিভিন্ন কোম্পানি এবং ঐ জেলায় অবস্থিত অন্যান্য সেমিকন্ডাক্টর কারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে জাপান জুড়ে সরবরাহ ব্যাহত হয়।

২০১১ সালের মার্চ মাসে উত্তর-পূর্ব জাপানে আঘাত হানা মহাভূমিকম্পের সময়ও এই ধরনের চেইন প্রতিক্রিয়ার প্রভাব একটি সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছিল। সেই সময়েও বিসিপি বা ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা রক্ষার একটি পরিকল্পনার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।

বিসিপি হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বা কাঠামোগত পরিকল্পনা, যা প্রতিষ্ঠানসমূহকে তাদের মূল ব্যবসা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের মতো জরুরি পরিস্থিতিতেও চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে নিশ্চিত করে। তবে, যদি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটেই থাকে, সেক্ষেত্রে এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হল স্বল্পতম সময়ের মধ্য কার্যক্রম পুনরায় চালু করা। একটি দুর্যোগ প্রশমন পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে হলো মানুষের জীবন রক্ষা করা অন্যদিকে বিসিপি’র লক্ষ্য হচ্ছে মূলত ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতাকে নিশ্চিত করা।

কুমামোতোর ভূমিকম্পগুলো আবারও বিসিপি’র একটি খসড়া প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে।

এই তথ্যগুলি ২০২৩ সালের মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(১১) টেলিফোন ট্রাইয়েজ

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা ১১টি মুখ্য বাক্যের মধ্যে দিয়ে ২০১৬ সালে কুমামোতো জেলায় আঘাত হানা প্রচণ্ড ভূমিকম্প থেকে লাভ করা শিক্ষার দিকে ফিরে দেখবো। আজ আমরা ট্রাইয়েজিং টেলিফোন কলের দিকে নজর দেব।

কুমামোতো ভূমিকম্পসমূহের সময়, কুমামোতো শহরের অগ্নি নির্বাপণ দপ্তরে ভূমিকম্পের অব্যবহিত পরেই ফোনের পর ফোন কল আসতে থাকে। ১৪ই এপ্রিলের প্রথম বড় কম্পনটি আঘাত হানার পর থেকে ১৬ই এপ্রিলের প্রধান ভূমিকম্পটি আঘাত হানার মধ্যে, দমকল বিভাগ ২,৮০০-রও বেশি ফোন কল পেয়েছে, যা হচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের প্রায় ১০ গুণ।

তবে এইসব টেলিফোন কলের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৭০০ বা ৬০% ছিল উদ্ধারের অনুরোধ বা জরুরি সেবার জন্য নয়। বরং, সেগুলো ছিল কম জরুরি। অনেক লোক ফোন করেছিলেন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কথা জানাতে বা কোথায় আশ্রয় নেবেন তা জানার জন্য।

দমকল বিভাগ সব টেলিফোন কলে সাড়া দিতে পারেনি। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উদ্ধারকারী পাঠানো ছাড়া তাদের কাছে কোন বিকল্প ছিল না। এই অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে এবং একটি বড় ধরনের ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত থাকার উদ্দেশ্যে, তারা টেলিফোন কলের জরুরির মাত্রা প্রয়োজনের ভিত্তিতে সনাক্ত করার জন্য দেশের মধ্যে প্রথমবারের মত একটি কার্যপ্রণালী নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে।

অধিবাসীদেরও জরুরি সেবায় যোগাযোগ করার আগে তাদের পরিস্থিতি প্রকৃত অর্থেই জরুরি কিনা তা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। উদ্ধারকারীদের যেখানে সত্যিকারের প্রয়োজন সেখানে পাঠানোর জন্য, অধিবাসীদেরও একটি ভূমিকম্পের পরে জরুরি নয়, এমন বিষয়ে দমকল বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে, যেমন: গণপরিষেবা বিষয়ে অনুসন্ধান করা।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের মে মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।