দুর্যোগ প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর

বিদেশিদের সরিয়ে নেয়া: দুর্যোগের সময় কীভাবে সকলকে রক্ষা করা যায়

(১) বিদেশিরা হচ্ছে মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। যখন একটি দুর্যোগ আঘাত হানে, তখন জাপানে বসবাসকারী বিদেশিদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, কেননা তারা ভাষা এবং সংস্কৃতির পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির মুখে থাকেন। জাপানে কীভাবে আমরা দুর্যোগকে কাটিয়ে উঠতে পারব? এই ধারাবাহিকে আমরা সারা জাপানের বিভিন্ন ঘটনা থেকে পাওয়া শিক্ষার উপর আলোকপাত করছি।

অল্পদিনের জন্য ভ্রমণে আসা পর্যটকদের বাদ দিয়ে জাপানে বসবাস করা বিদেশিদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ। এর অর্থ হচ্ছে প্রতি ৫০ জনে একজন হচ্ছেন বিদেশি, আর বিদেশিদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ।

দেশ এবং অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে জাপানে বসবাস করা বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এসেছেন চীন থেকে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। নির্মাণ খাত এবং কৃষি খাতে আরও বেশি দক্ষতা অর্জনের জন্য কারিগরী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় বেশি বেশি করে ভিয়েতনামের লোকজন জাপানে আসছেন। দক্ষিণ কোরীয়া থেকে আসা বিদেশিরা তৃতীয়, ফিলিপিনোরা চতুর্থ এবং ব্রাজিলীয়রা রয়েছেন পঞ্চম স্থানে।

চীন থেকে আসা ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান ডাইভারসিটি জাপান-এর ইয়াং যি বেশ কয়েকটি দুর্যোগ আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন যার মধ্যে কুমামোতো জেলায় ২০১৬ সালে আঘাত হানা একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তার গবেষণার বিষয় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশিদের পরিস্থিতির উপর কেন্দ্রীভূত।

ইয়াং বলছে্ন, যদিও “বিদেশি” শব্দটি সম্মিলিতভাবে সমস্ত বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, তারপরও বিদেশিদের সবারই রয়েছে নিজস্ব ভাষা এবং প্রথা। সুতরাং জাপানি এবং বিদেশি উভয়ের জন্যই দুর্যোগের সময়ে একে অন্যকে অনুধাবন ও সাহায্য করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ইয়াং ভাষা এবং সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময়তাকে বিবেচনায় নিয়ে সবাইকে সহযোগিতা করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।

আমাদের পরবর্তী পর্বে কুমামোতো ভূমিকম্পের সময়ে যে সব ঘটনা প্রকৃতই ঘটেছিল সেগুলোর কথা তুলে ধরা হবে।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(২) বিদেশিদের সামনে দেখা দেয়া ভাষার প্রতিবন্ধকতা

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। জাপানে যখন একটি দুর্যোগ আঘাত হানে তখন বিদেশি বসবাসকারীরা ভাষা ও সংস্কৃতির পার্থক্যের কারণে সমস্যার মুখে পড়তে পারেন।
এই ধারাবাহিকে আমরা কীভাবে বিদেশি বসবাসকারীরা দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারে তার উপর আলোকপাত করছি। আজ আমরা পাকিস্তানি একজন মানুষের গল্প শুনাব, যিনি জাপানে আসার ঠিক পরপরই বিশাল এক ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন।

পাকিস্তানি একজন ইমাম শিরাজ এস খাঁন দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের কুমামোতো শহরে বাস করেন। এই শহরে আসার এক মাস পর ২০১৬ সালের ১৪ই এপ্রিল একটি ভূমিকম্প সেখানে আঘাত হানে, যেটার প্রচণ্ডতা ছিল জাপানি পরিমাপক শূন্য থেকে সাত মাত্রার স্কেলে ৭। জনাব খাঁন মনে করেছিলেন, ভবনের ভেতরে অবস্থান করা বিপদজনক হতে পারে, তাই অন্যান্য মুসলমানদের সাথে মিলে মসজিদের কাছের একটি পার্কে তিনি সরে গিয়েছিলেন। তখন ছিল রাত এবং বৃষ্টিও শুরু হয়েছিল।

খাঁন ও অন্যান্যদের এরপর “ভাষাগত বাধার” মুখে পড়তে হয়। তিনি বলেছেন, “কর্মকর্তারা একটি গাড়িতে করে সেখানে এসেছিলেন এবং আমাদের কিছু একটা বলেছিলেন, তবে তারা কী বলছিলেন তা আমি বুঝতে পারিনি। সেখানে আমাদের রাতে থাকতে হয়।”
খাঁন ও অন্যান্যরা অবশেষে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারলেও, সেখানে অন্য এক সমস্যার মুখে তাদের পড়তে হয়: এটি ছিল আশ্রয় কেন্দ্রের খাবার।

মুসলমানরা খাবার হিসাবে হালাল সনদ পাওয়া খাদ্য বেছে নেন। হালাল হচ্ছে ইসলামি বিধান অনুযায়ী মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত সঠিক খাদ্য সামগ্রী। তবে খাঁন বলছেন, আশ্রয় কেন্দ্রে যে খাবার পরিবেশন করা হয়, তাতে কোন ধরনের উপাদান ছিল সেটা তার জানা ছিল না। ফলে তিনি কোনো কিছুই খেতে পারেননি। স্থাপনার কর্মীদের কাছে উপাদান সম্পর্কে তিনি জানতে চাইলে তারা বলেছিলেন, জরুরি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছিল বলে সেটি তাদের জানা ছিল না।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৩) স্থানীয় সংস্কৃতি বিনিময় সংগঠন কীভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করেছে

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। জাপানে বিদেশি বসবাসকারীদের পক্ষে কীভাবে দুর্যোগ কাটিয়ে উঠা সম্ভব, এই ধারাবাহিকে আমরা তার উপর আলোকপাত করছি। আজ আমরা স্থানীয় একটি সংস্কৃতি বিনিময় গ্রুপ কীভাবে বিদেশিদের সাহায্য করেছে সে বিষয়ে কথা বলব।

২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে কুমামোতো জেলায় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানলে শহরে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। পাকিস্তান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ফিলিপাইনের লোকজন এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

কুমামোতো ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন তাদের সাহায্য করেছিল। বিদেশি বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবণ নিয়ে নিয়মিতভাবে তাদের পরামর্শ প্রদানের জন্য শহর কর্তৃপক্ষ ঐ সংগঠনটি নির্দেশ দেয়। প্রতিষ্ঠানটির দপ্তর যেখানে অবস্থিত সেই কুমামোতো সিটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারকে দুর্যোগের সময় বিদেশিদের সাহায্য করার জন্য তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার প্রধান দপ্তর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

ঐ সচিবালয়ের তৎকালীন প্রধান ইয়াগি হিরোমাৎসু কেন্দ্রটি যাতে বিভিন্ন ভাষা এবং সংস্কৃতির সাথে কাজ করতে পারে এমন আশ্রয় স্থান হয়ে উঠতে পারে সেই লক্ষ্যে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন । ইয়াগি বলেন লোকজনকে তাদের ভাষা বা অন্য কোন সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করতে এবং নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে চলতে তাদের কোন সাহায্যের দরকার আছে কিনা তা জানতে তিনি সেখানে প্রায়ই ঘুরে বেড়াতেন।

জাপানি এবং বিদেশি নাগরিক সহ প্রায় ১৪০ জন মানুষ সেই কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন। খাবারের সময়সূচি, পরিবহন এবং অন্যান্য তথ্য সাদা একটি বোর্ডে ইংরেজি, চীনা এবং অন্যান্য ভাষায় লিখে রাখা হত।

ধর্ম এবং সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন খাদ্যাভাসের প্রয়োজনও পূরণ করেছিলেন কর্মকর্তারা। ইয়াগি বলেন খাবারে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদান ব্যাখ্যা করে বলায় অনেকেই খুব স্বস্তি অনুভব করেছিলেন।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৪) আশ্রয় কেন্দ্রের জীবন

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। জাপানে বিদেশি বসবাসকারীদের পক্ষে কীভাবে দুর্যোগ কাটিয়ে উঠা সম্ভব, এই ধারাবাহিকে আমরা তার উপর আলোকপাত করছি। আজ আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসকারী বিদেশিদের অবস্থার উপর আলোকপাত করব।

২০১৬ সালের এপ্রিলে কুমামোতো জেলায় আঘাত হানা ভূমিকম্পে বহু জায়গার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল। বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল রাস্তাঘাট। ফলে, এমনটি নয় যে দুর্যোগের সময় বিদেশিদের জন্য সাহায্য কর্মকাণ্ডের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সকল বিদেশি যে গিয়ে যে উঠতে পেরেছিলেন। এসময়ে স্থানীয় কর্মকর্তারা গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে সব আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করতেন।

কুমামোতোর দীর্ঘ ৩০ বছরের বাসিন্দা ইয়াং জুন আশ্রয় কেন্দ্রে চীনা অধিবাসীদের সাহায্য করার দায়িত্ব নেন। তিনি কুমামোতো ইন্টান্যাশনাল ফাউন্ডেশনে চীনা ভাষায় পরামর্শদানের কাজ করেন। ইয়াং বলেন যে, আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শনকালে তিনি জাপানি নাগরিকে ঠাসা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিদেশিদের বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে দেখেছেন।

ইয়াং বলেন, “আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কেমন আছেন?’ প্রশ্নটা করেছিলাম তাদের মাতৃভাষায়। মাতৃভাষা শুনে তাদের চেহারায় স্বস্তির ভাব ফুটে উঠেছিল, এমনকি যারা বহু বছর জাপানে বসবাস করছেন তাদের চেহারাতেও। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, কার কার চোখ জলে ভরে উঠতেও দেখেছিলাম”।

ভাষার প্রতিবন্ধকতা নানা ধরনের সমস্যার জন্ম দেয়। একটি আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, জাপানিরা অভিযোগ করছেন এই বলে যে, একজন বিদেশি যা প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি সাহায্য-সামগ্রী নিচ্ছেন। ইয়াং সেই বিদেশি’র সাথে কথা বলেন। আর তখনই জানা যায়, তিনি বাড়তি জিনিস নিয়ে রাখেন পরিবারের এক সদস্যের জন্য, যে দিনের বেলায় আশ্রয় কেন্দ্রে উপস্থিত থাকে না। একথা অন্যান্যদের ব্যাখ্যা করে বলার পর, ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৫) কীভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যাওয়া বিদেশিদের বিচ্ছিন্ন হওয়া রোধ করা যায়

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা জাপানে বসবাসকারী বিদেশিরা কীভাবে দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারে, তার উপর আলোকপাত করছি। আজ আমরা বিদেশিদের বিচ্ছিন্ন হওয়া রোধ করার উপায়গুলোর প্রতি নজর দেব। 

২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে কুমামোতো জেলায় আঘাত হানা বড় আকারের ভূমিকম্পটির সময় দেখা যায় যে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদেশি বাসিন্দাদের বিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়তে সাহায্য করেছিল।

সেসময় তাইওয়ান থেকে আসা চিউ কুয়েই-ফেন ঐ শহরে জাপানি ভাষার ক্লাসে অংশ নিচ্ছিলেন। ভূমিকম্প আঘাত হানলে, তিনি তার ছোট সন্তান এবং স্বামীকে নিয়ে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে, সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রই ছিল আশ্রয়প্রার্থী লোকজনে পরিপূর্ণ এবং এরফলে তার পরিবারকে বাধ্য হয়ে গাড়িতে অথবা কোনো বন্ধুর বাড়িতে থাকতে হয়।

তিনি বেশ কিছু দিন ত্রাণ সরবরাহ পেতে অথবা কোন ধরনের তথ্য পেতে ব্যর্থ হন।

চার দিন পর, অবশেষে তিনি বাড়ি ফিরে আসতে পারলেও তাকে পানি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। এমনকি পানি সরবরাহ পুনরায় চালু হওয়ার পরেও, কলের পানি তখনও ঘোলা ছিল এবং এই পানি পান করা বা গোসলের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। তিনি তার অ-জাপানি বন্ধুদের এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেও কোন ধরনের তথ্য পেতে সক্ষম হননি। কী করতে হবে তা নিয়ে যখন কোন কুল কিনারা পাচ্ছিলেন না, সেই সময়ে জাপানি ক্লাসে তার পরিচিতরা তাকে সাহায্য করেছিল।

চিউ এবং অন্যান্যদের অসুবিধার কথা শুনে ক্লাসের স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকরা দৈনন্দিন জীবনে সহায়তায় নিয়োজিত প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো সম্পর্কে তাদের তথ্য প্রদান করেছিলেন। তারা জাপানি ক্লাসটিতে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে বার্তা আদান-প্রদানকারী “লাইন” নামক অ্যাপে একটি গ্রুপ তৈরি করেন এবং খাবার বিতরণ ও গোসলের স্থান সম্পর্কিত তথ্য ভাগাভাগি করে নেন।

চিউ’র ভাষ্যানুযায়ী, গ্রুপটিতে তার পরিবার এবং অন্যান্যদের বাস করা এলাকার আশেপাশে অবস্থিত সেবা সংশ্লিষ্ট স্থান সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছিল এবং এটি সত্যিই খুব সহায়ক ছিল।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৬) বিদেশিদের জন্য সহজবোধ্য জাপানি ভাষা

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা জাপানে বসবাসকারী বিদেশিরা কীভাবে দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারে, তার উপর আলোকপাত করছি। আজ আমরা বিদেশিদের জন্য সহজবোধ্য জাপানি ভাষার ব্যবহারের প্রতি নজর দেব।

এর আগে আমরা ২০১৬ সালের কুমামোতো জেলার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরে বিদেশি অধিবাসীদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা এই আভাস দিচ্ছে যে, দুর্যোগের সময়ে ভাষাগত বাধা কাটিয়ে ওঠা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

লোকজন চাইলে প্রয়োজনীয় তথ্য বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করার জন্য স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়াও তারা “সহজ জাপানি ভাষা” নামে অভিহিত ভাষাও ব্যবহার করতে পারেন, যেটির প্রচারণা সরকার এবং পৌরসভাগুলো করছেন।

সহজবোধ্য জাপানি ভাষায় সংক্ষিপ্ত আকারে তথ্য জানানোর জন্য এটি একটি পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টা।

পৌরসভাগুলোর ওয়েবসাইট এবং বুলেটিনে ইতিমধ্যেই “সহজ জাপানি ভাষা” ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে এই ভাষা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও ব্যবহার করা হবে।

কেউ কেউ বলছেন, জাপানি ভাষার অভিব্যক্তিগুলোতে মাঝে মাঝে ব্যাখ্যা না করা কিছু অর্থও থাকে, যা বিদেশিদের জন্য বোঝা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, “গোজিউ নি ওমোচি কুদাসাই” বা “ অনুগ্রহ করে নিজেই নিন” এই বাক্যাংশটি প্রায়ই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের সময়ে ব্যবহার করা হয়।

এই বাক্যাংশটি প্রায়ই এই অর্থে ব্যবহার করা হয় যে, লোকজন নিজের ইচ্ছামত এখান থেকে কোন কিছু নিতে পারেন। কিন্তু কেবলমাত্র যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই নিতে পারবেন, যাতে যত বেশি সম্ভব লোক যেন তা পেতে পারেন।

এই বাক্যাংশটি বুঝা আরো সহজ হতো, যদি এভাবে ব্যাখ্যা করে বলা থাকতো যে, প্রত্যেক ব্যক্তি কেবল মাত্র একটি জিনিস নিতে পারবেন।

দুর্যোগ মোকাবিলা করা বিদেশিদের উপর গবেষণা করা একজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, একটি বার্তা যখন নির্ভুল এবং সহজবোধ্য ভাবে প্রচার করা হয় তখন কোন ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে না।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৭) খাদ্য সংস্কৃতি বিবেচনায় নিয়ে জরুরী খাদ্য

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা জাপানে বসবাসকারী বিদেশিরা কীভাবে দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারে, তার উপর আলোকপাত করছি। আজ আমরা জরুরী খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব যা বিভিন্ন খাদ্য সংস্কৃতিকে বিবেচনা করে।

জাপানে এরকম কিছু বিদেশি আছেন যারা আশ্রয় কেন্দ্রের রান্না ঘরে ঢালাওভাবে তৈরি করা খাবার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণে খেতে পারেন না।

কঠোর ইসলামী বিধান অনুসরণ করে হালাল ভাবে উৎপাদন ও মজুত করে রাখা সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি খাবারই মুসলমানরা কেবলমাত্র খেতে পারেন। এরকম জরুরী কিছু খাবার জাপানে আছে, যেগুলো হালাল অনুমোদন লাভ করেছে।

পশু-ভিত্তিক সামগ্রী যারা খান না, সেরকম নিরামিষ ভোজী লোকজনের জন্যও বিশেষভাবে তৈরি কিছু জরুরী খাদ্য জাপানে আছে। কাপ নুডলসসহ আরো বহু ধরনের নিরামিষ ভিত্তিক জরুরী খাদ্য রয়েছে যেগুলোতে পশু কিংবা মাছের কোনও রকম উপাদান থাকে না।

ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান ডাইভার্সিটি জাপানের ইয়াং যি, যিনি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশিদের পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি, খাদ্য নিয়ে যাদের বিশেষ বিবেচনা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে আগে থেকে জরুরী খাবার মজুত করে রাখার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ইয়াং আরও বলেছেন যে, আশ্রয় কেন্দ্রেরও উচিত বিদেশিদের জন্য এবং জাপানের যে সব লোকজন এই খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য এই ধরনের খাবার মজুত করে রাখা।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৮) বিদেশি বসবাসকারী দুর্যোগ প্রতিরোধ নেতৃবৃন্দ

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। এই ধারাবাহিকে আমরা জাপানে বসবাসকারী বিদেশিরা কীভাবে দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারে, তার উপর আলোকপাত করছি। ধারাবাহিকটির শেষ পর্বে, আজ আমরা বিদেশি বসবাসকারীরা দুর্যোগ প্রশমনে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে কী ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকেন সে দিকে নজর দেব।

ওকাইয়ামা জেলার সোজা শহরে ভিয়েতনামি এবং ব্রাজিলের নাগরিকসহ প্রায় দেড় হাজার বিদেশি বসবাস করেন। ১০ বছর আগে, বিদেশি বসবাসকারীদের উদ্দেশ্যে শহর কর্তৃপক্ষ এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছিল যাতে করে নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্যোগ প্রতিরোধে তারা নেতৃত্ব দিতে পারেন। ব্রাজিল থেকে আসা ট্যান শুন ওয়াই এই কর্মসূচিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। জাপানের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বর্তমানে তিনি একজন শহর কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করছেন। ২০১১ সালের মার্চ মাসে উত্তর পূর্ব জাপানে ভূমিকম্প ও ৎসুনামি আঘাত হানার পর নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার উপায় যেসব বিদেশিদের জানা ছিল না তারা যে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন তা জানতে পারার পর ট্যান এক সংকট অনুভব করেন। দুর্যোগ প্রশমন নিয়ে জানার প্রয়োজনীয়তা যে বিদেশিদের আছে তা গভীর ভাবে অনুধাবন করার পর, কীভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা পরিচালনা করতে হয় অথবা কীভাবে বালির বস্তা তৈরি করতে হয়, এধরনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য তিনি শহর কর্তৃপক্ষের প্রতি আবেদন জানান। যে সকল বিদেশি এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তারা “বিদেশি বসবাসকারী দুর্যোগ প্রতিরোধ নেতৃবৃন্দ” হিসাবে পরিচিত হন এবং নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ মহড়ায় তারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে থাকেন। বর্তমানে এই শহরে ৮টি দেশের ৪৩ জন লোক দুর্যোগ প্রশমন নেতা হিসাবে কাজ করছেন। ২০১৮ সালে ভারী বর্ষা পশ্চিম জাপানে আঘাত হানলে তা শহরগুলোকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। ট্যান এবং অন্যান্য নেতারা তাদের নিজ নিজ ভাষায় নিজ নিজ সম্প্রদায়কে তথ্য প্রদান করেছিলেন, যেমন: চীনা এবং পর্তুগিজ ভাষা। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশিদের তারা ত্রাণ সামগ্রীও বিতড়ণ করেছিলেন এবং অধিবাসীদের প্রতি সমর্থন জানাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো তারা পরিদর্শন করেছিলেন।

নেতৃবৃন্দ বিদেশিদের কাছ থেকে নেয়া চিন্তাভাবনা অন্তর্ভুক্ত করে দুর্যোগ নির্দেশিকা প্রণয়নের পরিকল্পনা করছেন। আটটি ভাষায় অনুবাদ করার পর নির্দেশিকাটি তারা বিদেশি বসবাসকারীদের মধ্যে বিতড়ণ করবেন।

বিদেশি বসবাসকারীরা দুর্যোগ প্রশমনে নিজেদের সম্প্রদায়ের সাথে ক্রমাগত জড়িত থাকায় তা দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে জাপানিদের সাথে মিলে একযোগে কাজ করার পথকে সুগম করে তুলছে।

এই তথ্যগুলো ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।