দুর্যোগ প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর

জরুরি সতর্কতা

(১) জরুরি সতর্কতা আসলে কী?

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। গুরুতর কোন বিপর্যয় ঘটবে এধরনের সম্ভাবনা যখন খুব বেশি বা তা ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে, এমন পরিস্থিতিতে জাপান আবহাওয়া এজেন্সি জরুরি সতর্কতা জারি করে থাকে। এই ধারাবাহিকে আমরা “জরুরি সতর্কতা” বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোকপাত করব, যেমন “জরুরি সতর্কতার” সাথে সাধারণ “সতর্কতার” পার্থ্যক্য কী এবং কোন ধরনের পরিস্থিতিতে এই সতর্কতা জারি করা হয়ে থাকে।

জাপান আবহাওয়া এজেন্সি প্রাকৃতিক ঘটনার কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য বিপর্যয়ের বিষয়ে লোকজনকে সতর্ক করে দিয়ে থাকে। আবহাওয়া পরিস্থিতির ক্ষেত্রে, এজেন্সি ছয় ধরনের জরুরি সতর্কতা জারি করে থাকে – প্রবল বর্ষণ, ঝড়, ঝড় বৃদ্ধি, উঁচু ঢেউ, ভারী তুষারপাত, এবং তুষার ঝড়। জরুরি সতর্কতায় লোকজনকে অস্বাভাবিক ঘটনা যার মাত্রা “সতর্কতার মাত্রার” থেকে অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে সে বিষয়ে প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। এটা খুবই সম্ভব যে সতর্কতা জারি করার সময় মারাত্মক কোন বিপর্যয় ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে।
জরুরি সতর্কতার আওতায় থাকা এলাকাগুলো দুর্যোগ আঘাত হানার গুরুতর ঝুঁকির সম্মুখীন হয় যা কয়েক দশকে একবার ঘটে থাকতে পারে এবং অধিকাংশ লোকের এধরনের অভিজ্ঞতা নেই। এসব এলাকায় থাকা লোকজনকে তাদের প্রাণ বাঁচাতে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(২) জরুরি সতর্কতা ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রেক্ষাপট

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। মারাত্মক দুর্যোগের উচ্চ আশংকা যদি থাকে অথবা যদি দুর্যোগ আঘাত হেনে থাকে, সেক্ষেত্রে জাপানের আবহাওয়া এজেন্সি জরুরি সতর্কতা জারি করে।
চলতি ধারাবাহিকে আমরা ‘জরুরি সতর্কতা’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। ‘জরুরি সতর্কতা’ এবং সাধারণ ‘সতর্কতা’এর মধ্যে পার্থক্য কী এবং কোন্‌ ধরনের পরিস্থিতিতে সতর্কতা জারি করা হয় — এসব বিষয়ের ওপর আলোকপাত করছি আমরা।

আবহাওয়া এজেন্সি জরুরি সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করেছে, কারণ অতীতে বড় দুর্যোগের সময় এজেন্সির জারি করা প্রবল বৃষ্টিপাত, ভূমিধ্বস বা অন্যান্য দুর্যোগ সংক্রান্ত সতর্কীকরণ লোকেদের নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার তাগিদ দিতে অথবা ক্ষতি এড়ানোয় খুব একটা কার্যকর হয়নি, যদিও তখন বার বার সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পশ্চিম জাপানের কীই উপদ্বীপের ওপর আঘাত হানা এক তাইফুনে ৯০ জনেরও বেশি লোক প্রাণ হারান, যদিও আবহাওয়া এজেন্সি এই মারাত্মক দুর্যোগ সম্বন্ধে লোকজনকে আগে থেকে অনবরত সতর্ক করে আসছিল।

২০১১ সালের মার্চ মাসে পূর্ব ও উত্তরপূর্ব জাপানে যখন প্রচণ্ড শক্তিশালী মহাভূমিকম্প এবং ৎসুনামি আঘাত হানে, তখন এজেন্সি একটি অতিকায় ৎসুনামির ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছিল। কিন্তু সেই সতর্কতা যে লোকজনকে দ্রুত নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে চালিত করতে পেরেছে তা না। এরপর এজেন্সি জরুরি সতর্কতা ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ২০১৩ সালে সম্পর্কযুক্ত আইন সংশোধন করে। এর উদ্দেশ্য, সহজে বোধগম্য হয় এমন উপায়ে লোকের মনে সংকট বোধের জন্ম দেওয়া এবং নিজেদের রক্ষা করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে তাদের চালিত করা।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৩) ঘোষণার মানদণ্ড

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। শীঘ্রই গুরুতর বিপর্যয় ঘটার উচ্চ সম্ভাবনা থাকলে বা ইতিমধ্যেই যদি বিপর্যয় ঘটে থাকে, সেক্ষেত্রে জাপানের আবহাওয়া এজেন্সি জরুরি সতর্কতা জারি করে থাকে।
এই ধারাবাহিকে, আমরা “জরুরি সতর্কতা” এবং সাধারণ “সতর্কতা”-এর মধ্যে পার্থক্য এবং ঠিক কোন্‌ ধরনের পরিস্থিতিতে এই সতর্কতা জারি করা হয়, “জরুরি সতর্কতা” সংক্রান্ত এরকম বিস্তারিত বিষয়ের উপর আলোকপাত করছি।

গুরুতর বিপর্যয়ের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি থাকলে জারি করা হবে, আবহাওয়া কর্মকর্তাদের এরকম উল্লেখ করা “জরুরি সতর্কতা” ঠিক কোন্‌ ধরনের পরিস্থিতিতে জারি করা হয়? যখন একটি অঞ্চলে “অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে ঘটে থাকে এমন কোনো দুর্যোগ” সুনির্দিষ্ট কোনো এলাকায় ইতিমধ্যে ঘটছে বা ঘটার পূর্বাভাস থাকে, তখনই মূলত সেখানে এটি জারি করা হয়। অতীতে জরুরি সতর্কতা জারি করতে হওয়া আবহাওয়া পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ২০১১ সালের পূর্ব জাপান মহাভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট বিশাল ৎসুনামি, যার ফলে ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন বা নিখোঁজ হয়েছিলেন; ১৯৫৯ সালের তাইফুন “ইসেওয়ান” এর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস, যা জাপানে সেসময়ের জন্য সর্বোচ্চ স্তরের জোয়ারের রেকর্ড স্থাপন করেছিল এবং যার ফলে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন বা নিখোঁজ হয়েছিলেন; ২০১৯ সালের তাইফুনের ফলে ঘটা প্রবল বর্ষণ, যা পূর্ব জাপানের বিশাল অংশে বন্যার সৃষ্টি করেছিল এবং যার কারণে ১শ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল বা নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছিল। উল্লেখ্য, কর্তৃপক্ষকে জরুরি সতর্কতা জারি করতে বাধ্য করা এরকম অনেক বিপর্যয় জাপানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছিল।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৪) জরুরি সতর্কতার আগেই আশ্রয়কেন্দ্রে গমন

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। শীঘ্রই গুরুতর বিপর্যয় ঘটার উচ্চ সম্ভাবনা থাকলে বা ইতিমধ্যেই যদি বিপর্যয় ঘটে থাকে, সেক্ষেত্রে জাপানের আবহাওয়া এজেন্সি জরুরি সতর্কতা জারি করে থাকে।
এই ধারাবাহিকে, আমরা “জরুরি সতর্কতা” এবং সাধারণ “সতর্কতা”-এর মধ্যে পার্থক্য এবং ঠিক কোন্‌ ধরনের পরিস্থিতিতে এই সতর্কতা জারি করা হয়, “জরুরি সতর্কতা” সংক্রান্ত এরকম বিস্তারিত বিষয়ের উপর আলোকপাত করছি।

জরুরি সতর্কতা জারি করলে লোকজনের কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? প্রবল বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে, যদি একটি জরুরি সতর্কতা জারি করা থাকে, তাহলে লোকজনকে মনে করতে হবে যে, তারা একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন, কেননা সম্ভাব্য একটি দুর্যোগ দেখা দিতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে, এটা গুরুত্বপূর্ণ যে লোকজন যেন জরুরি সতর্কতা জারি করার আগেই আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার খবর এবং আবহাওয়া সতর্কতার ৫টি পর্যায়ের একটি স্কেল রয়েছে। জরুরি সতর্কতা হচ্ছে ৫ম পর্যায়ের সতর্কতা যা হচ্ছে এই স্কেলের সর্বোচ্চ পর্যায়। প্রবল বৃষ্টিপাত বা বন্যার ৩য় পর্যায়ের সতর্কতা জারি করা হলে বয়স্ক লোকজন বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার সুপারিশ করা হয়। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ হচ্ছে ৪র্থ পর্যায়ের সতর্কতা, যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে থাকা সব লোকজনকে দ্রুত অন্যত্র সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। ৫ম পর্যায়ের সতর্কতা হচ্ছে একটি বন্যা দেখা দেয়া নদী সংক্রান্ত খবরের পাশাপাশি একটি জরুরি সতর্কতা। এই পর্যায়ে একটি দুর্যোগ হয়তো ইতিমধ্যেই সংঘটিত হয়ে গেছে এবং লোকজন হয়তো আশ্রয়কেন্দ্রের স্থানে যেতে নানা ধরনের বিপদের মুখোমুখি হচ্ছেন। উঁচু খাড়া পাহাড়ের কাছে বাড়ি থাকলে তাদেরকে পাহাড় থেকে দূরের ঘরে চলে যাওয়া’সহ লোকজনকে দুই তলা বা তার উপরের তলায় সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, বা নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষায় অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হচ্ছে।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৫) প্রস্তুতি নিয়ে রাখা এবং কোন দিকে নজর রাখতে হবে

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। মারাত্মক দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে কিংবা ইতিমধ্যে ঘটেছে, সেরকম অবস্থায় জাপানের আবহাওয়া এজেন্সি জরুরি সতর্কতা প্রচার করে।
এই ধারাবাহিকে আমরা “জরুরি সতর্কতা” এবং সাধারণ “সতর্কতা”-এর মধ্যে পার্থক্য এবং কোন ধরনের পরিস্থিতিতে সতর্কতা প্রচার করা হয় – জরুরি সতর্কতার সেরকম বিস্তারিত বিভিন্ন দিকের উপর নজর দিচ্ছি।

ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে দুর্যোগ আঘাত হানার বেলায় নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার যেখানে বসবাস কোন ধরনের দুর্যোগ সেই এলাকার ক্ষতি করতে পারে এবং নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র কোথায় আছে, সে সম্পর্কে জানা থাকা পদক্ষেপ গ্রহণের বেলায় আপনাকে যথেষ্ট সাহায্য করে থাকে। স্থানীয় সরকার সমূহের বিতরণ করা ঝুঁকির মানচিত্র আপনার কি জানা থাকা দরকার তা খুঁজে পাওয়ার বেলায় খুবই উপকারী। এছাড়া আপনার স্মার্ট ফোনে দুর্যোগ তথ্য অ্যাপস যুক্ত থাকলে দুর্যোগ আঘাত হানার সময় প্রয়োজনীয় তথ্য আপনি পেতে পারেন।

আরেকটি পরামর্শ হচ্ছে এরকম যে ঝড়ের সবচেয়ে মারত্মক অবস্থা পার হয়ে যাওয়ার পর এবং জরুরি সতর্কতা সঙ্কেত সতর্কতার পর্যায়ে নামিয়ে আনার পর সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে বলে ধরে নেয়া আপনার উচিত হবে না। ২০১৯ সালে তাইফুন হাগিবিস থেকে শুরু হওয়া প্রচণ্ড বর্ষণের সতর্কতা তুলে নেয়ার পর অনেক নদীর পানি উপচে পড়েছিল। কিছু মানুষ নিরাপদ আশ্রয় থেকে বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখেছিলেন যে সমুদ্রের পানি বেড়ে গেছে এবং তাদের বাড়িঘর ডুবিয়ে দিয়েছে।

আবহাওয়া এজেন্সি এবং ভূমি ও পরিবহন মন্ত্রণালয় এর থেকে একটি শিক্ষা লাভ করে। এরা এখন “জরুরি সতর্কতা তুলে নেয়া হয়েছে” না বলে যা বলছে তা হল, “জরুরি সতর্কতা সতর্কতার মাত্রায় নামিয়ে আনা হয়েছে”। এমন কি জরুরি সতর্কতা বহাল না থাকলেও কর্মকর্তারা নদীর পানি উপচে পড়া এবং অন্যান্য ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কতা বজায় রাখার আহ্বান জনগণের প্রতি জানাচ্ছেন।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।