দুর্যোগ প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর

ভারী বৃষ্টিজনিত সতর্কতা স্কেল এবং নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া সংক্রান্ত পরামর্শ

(১) সতর্কতার স্তর

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। জাপানে জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্যকার সময়কে “ৎসুইয়ু” বা বর্ষাকাল বলা হয়ে থাকে। এই সময়ে ভূমিধস এবং বন্যার মতো দুর্যোগ প্রায়ই ঘটে থাকে। আমাদের চলমান ধারাবাহিকে ভারী বৃষ্টিপাত এবং অন্যান্য দুর্যোগের পূর্বাভাসকালীন জারি করা আবহাওয়াজনিত সতর্কতা এবং নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া সংক্রান্ত তথ্যেসহ অনুসরণীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোকপাত করছি। আজ প্রথম পর্বে ভারী বৃষ্টি, বন্যা এবং ভূমিধসের জন্য পাঁচ স্তরের সতর্কতাজনিত স্কেলের উপর নজর দেবো।

জাপানে আবহাওয়া এজেন্সি প্রদত্ত সতর্কতা ও পরামর্শের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ থেকেও নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া সংক্রান্ত আদেশসহ ভারী বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সতর্কতামূলক তথ্য জারি করা হয়। জাপানে পাঁচ স্তরের সতর্কতাজনিত স্কেল, বিপদের মাত্রা এবং বাসিন্দাদের যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, তার উপর ভিত্তি করে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন স্তরে তথ্যসমূহ সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল।

প্রতিটি স্তরের জন্য বিভিন্ন রং ব্যবহার করা হয় যাতে মানুষ সহজাতভাবেই বিপদের মাত্রা বুঝতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, পর্যায় ৫ বা বিপদের সর্বোচ্চ স্তরের জন্য কালো রং ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে সর্বনিম্ন পর্যায় ১-এর রং হলো সাদা। আবহাওয়া এজেন্সি তাদের ওয়েবসাইটে ১৪টি ভাষায় প্রকৃত সময়ে আবহাওয়া এবং দুর্যোগের তথ্য সরবরাহ করে থাকে। এজেন্সির প্রকৃত সময়ের ঝুঁকির মানচিত্রে বিভিন্ন রঙে দুর্যোগের ঝুঁকির মাত্রা তুলে ধরা হয় এবং এই রংগুলো সতর্কতাজনিত স্কেলের স্তরের সাথে মিলে যায়।

পরবর্তী পর্বগুলোতে আমরা প্রতিটি সতর্কতা স্তরের বিশদ বিবরণ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর উপর আলোকপাত করব।

এই তথ্যগুলো ২০২৪ সালের জুন মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(২) স্তর এক এবং স্তর দুই

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। আমাদের চলমান ধারাবাহিকে ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধস সংশ্লিষ্ট জাপানের পাঁচ স্তরের সতর্কতাজনিত স্কেল এবং প্রতিটি স্তরে অনুসরণীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করছি। আজ দ্বিতীয় পর্বে সতর্কতাজনিত স্কেলের প্রথম দুটি সতর্কতা স্তরের বিষয়ে নজর দেবো।

যখন কোনো স্থানে ‘স্তর এক’ সতর্কতাজনিত স্কেল জারি করা হয়, তখন সেই এলাকার লোকজনকে আবহাওয়ার সর্বশেষ খবরের উপর নজর রাখতে উপদেশ দেওয়া হয়। আবহাওয়া এজেন্সির ওয়েবসাইটে সম্ভাব্য সতর্কতা এবং পরামর্শ সম্পর্কিত খবর প্রকাশ করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো লোকজনকে আগাম জানিয়ে রাখা যে কয়েক দিনের মধ্যে আবহাওয়া সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করা হতে পারে। সুতরাং, প্রথম স্তরের সতর্কতার ক্ষেত্রে এজেন্সির ওয়েবসাইটের মতো বিভিন্ন মাধ্যমে হালনাগাদ করা আবহাওয়ার তথ্যের উপর নজর রাখতে হবে।

‘স্তর দুই’ সতর্কতাজনিত স্কেল জারি করা হলে লোকজনকে উপদেশ দেওয়া হয় নিরাপত্তার জন্য তারা কোথায় যেতে পারে এবং কীভাবে যাবে তা জেনে রাখতে। এরই মধ্যে আবহাওয়া এজেন্সি ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা সম্পর্কে খবর ও পরামর্শ প্রকাশ করতে থাকে। চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় যাদের বসবাস তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়। আরও বলা হয়, ঝুঁকিপূর্ণ জায়গার ম্যাপ দেখে জেনে রাখুন আপনার বসবাসের জায়গায় কী ধরনের দুর্যোগ আঘাত হানতে পারে। জেনে রাখুন আপনার বাড়ির সবচেয়ে কাছে কোথায় আশ্রয়কেন্দ্র আছে এবং কোন পথে সেখানে পৌঁছানো যায়।

এই তথ্যগুলো ২০২৪ সালের জুন মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৩) স্তর তিন এবং স্তর চার

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। আমাদের চলমান ধারাবাহিকের আজ তৃতীয় পর্ব । এই ধারাবাহিকে আমরা ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধস সংশ্লিষ্ট জাপানের পাঁচ স্তরের সতর্কতাজনিত স্কেল এবং প্রতিটি স্তরে অনুসরণীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করছি। আজ আমরা সতর্কতাজনিত স্কেলের স্তর তিন এবং স্তর চার বিষয়ে নজর দেবো।

সতর্কতাজনিত স্কেলের ‘স্তর তিন’ জারি করা হলে বয়োবৃদ্ধ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকা লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া শুরু করার জন্য বাসিন্দাদের পরামর্শ দেয়া হয়।

এসময়ে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ বয়স্ক এবং অন্যান্য বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে “সরে যাওয়া” সংশ্লিষ্ট সতর্কতা জারি করে থাকে। এই পরিস্থিতিতে, জাপানের আবহাওয়া এজেন্সির ভারি বৃষ্টিপাত এবং বন্যা অথবা নদীর পানি ফুলে ওঠা সংশ্লিষ্ট সতর্কতা জারির সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রেক্ষিতে, সতর্কতাজনিত পরিস্থিতির এই পর্যায়ে বয়োজ্যেষ্ঠ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকা লোকজনকে তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করতে হবে।

এসময়ে অন্যান্যদের উচিত হবে নিরাপদ আশ্রয়স্থল যাচাই করে নেয়া এবং তারা নিজেদের সাথে যে জিনিসগুলো আশ্রয়স্থলে নিতে চান তা ব্যাগে গুছিয়ে নিতে শুরু করা। তবে, যদি মনে করেন আপনি বিপদে আছেন, তাহলে প্রয়োজনে স্বেচ্ছায় নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়া উচিত।

সতর্কতাজনিত স্কেলের ‘স্তর চার’ সতর্কতা হচ্ছে বিপজ্জনক এলাকাগুলোতে অবস্থানরত সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য একটি আদেশ। ভূমিধসের উচ্চ ঝুঁকি থাকলে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ এই আদেশ জারি করে থাকে। কর্তৃপক্ষসমূহের ভূমিধসের পাশাপাশি সম্ভাব্য বন্যার ঝুঁকি নিয়েও সতর্কতা জারি করার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রেক্ষিতে, সতর্কতাজনিত পরিস্থিতির এই পর্যায়ে, শুধুমাত্র বয়োজ্যেষ্ঠরাই নন, বিপজ্জনক স্থানে অবস্থান করা সকল ব্যক্তিরই নিজেদের সুরক্ষার জন্য নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে, একটি আশ্রয়কেন্দ্রই কেবল লোকজনের আশ্রয় নেয়ার জন্য একমাত্র নিরাপদ স্থান নয়। আপনার এলাকায় সবচেয়ে নিকটস্থ কোনো দৃঢ় ভবনও নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে। স্থানীয় সরকারের প্রস্তুত করা ঝুঁকি সংক্রান্ত মানচিত্র ব্যবহার করে লোকজনের উচিত হবে আগে থেকেই এসব স্থাপনার অবস্থান জেনে রাখা।

এই তথ্যগুলো ২০২৪ সালের জুন মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৪) স্তর পাঁচ-এর জন্য অপেক্ষা নয়

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। আমাদের চলমান ধারাবাহিকের আজ চতুর্থ পর্ব। এই ধারাবাহিকে আমরা ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধস সংশ্লিষ্ট জাপানের পাঁচ স্তরের সতর্কতাজনিত স্কেল এবং প্রতিটি স্তরে অনুসরণীয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করছি। আজ আমরা সতর্কতাজনিত স্কেলের চূড়ান্ত পর্যায় অর্থাৎ স্তর পাঁচ বিষয়ে নজর দেবো।

সতর্কতাজনিত স্কেলের ‘স্তর পাঁচ’ হলো নিজেদের জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনীয় যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মানুষজনের প্রতি একটি জরুরি অনুরোধ। স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ এসময়ে অবিলম্বে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লোকজনের প্রতি নির্দেশ দিয়ে থাকে, যেন একটি উচ্চ সম্ভাবনাময় অবশ্যম্ভাবি দুর্যোগ আসন্ন অথবা ইতোমধ্যে এসে পড়েছে।

সতর্কতাজনিত পরিস্থিতির এই পর্যায়ে, কর্তৃপক্ষ সম্ভবত যেসব স্থানে নদীর পানি ইতোমধ্যে তীর উপচে পড়েছে সেসব স্থানের তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করে দিয়েছে। অথবা, আবহাওয়া এজেন্সি হয়তোবা সর্বোচ্চ জরুরি সতর্কতাজনিত নির্দেশনা জারি করে ফেলেছে। এসময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময়ও হয়তোবা অনেকটাই পার হয়ে গেছে।

যখন সতর্কতাজনিত স্কেলের ‘স্তর চার’ জারি করা হবে তখনই সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে হবে। ‘স্তর পাঁচ’-এর জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। কারণ, তখন নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভবপর নাও হতে পারে। তাই, যেসব লোকজন এখনোও নিরাপদ স্থানে সরে যেতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের জন্য সতর্কতাজনিত স্কেলের ‘স্তর পাঁচ’ হলো জীবন রক্ষার জন্য দ্বিতীয় বার সুযোগ লাভ করার সমতুল্য। কখনোই এটি ভাবা ঠিক হবে না যে, চূড়ান্ত স্তরের সতর্কতাজনিত নির্দেশনা জারি হয়নি, তাই হাতে পর্যাপ্ত সময় রয়েছে। সুতরাং, সতর্কতাজনিত স্কেলের ‘স্তর চার’ জারি করা হলেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান।

এই তথ্যগুলো ২০২৪ সালের জুন মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৫) সরে যাওয়া কঠিন হলে কী করবেন

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধস সংশ্লিষ্ট জাপানের পাঁচ স্তরের সতর্কতাজনিত স্কেল এবং প্রতিটি স্তরে অনুসরণীয় বিষয়াবলী সংশ্লিষ্ট আমাদের চলমান ধারাবাহিকে আজ আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়া কঠিন হলে বিকল্প হিসেবে কী করা যেতে পারে তার উপর নজর দেবো।

কয়েক ঘণ্টা ধরে একটানা বর্ষণের কারণে হঠাৎ করে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে। এই ধরনের ক্ষেত্রে, বয়স্ক ব্যক্তিদের এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো তথ্য, এবং একই সাথে অন্যান্যদের সরে যাওয়া সংক্রান্ত নির্দেশনা সময়মতো জারি নাও হতে পারে। যদি বন্যার পানি নিজের অথবা আশপাশের এলাকায় প্রবাহিত হতে শুরু করে, তাহলে লোকজনের দূরবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়া অসুবিধাজনক হয়ে উঠতে পারে। এঅবস্থায় একটি বিকল্প হতে পারে নিকটবর্তী নিরাপদ স্থানে অথবা ভবনে আশ্রয়গ্রহণ করা। যদি ঘর থেকে বের হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তবে নিজ ভবনের উপরের তলায় আশ্রয়গ্রহণ করা যেতে পারে অথবা পাহাড়জনিত সম্ভাব্য বিপদ থেকে বাঁচতে ভবনের নিরাপদ দিকে আশ্রয়গ্রহণ করা যেতে পারে।

যদি পাহাড়ি অঞ্চলে একটি ছোট ও মাঝারি আকারের নদীর পানি পাড় উপচে প্লাবিত হয়, তবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা মূলত, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে নদীর দূরত্ব এবং এলাকার সাথে নদীর উচ্চতার পার্থক্যের উপর নির্ভর করে।

নদীর তীরবর্তী এলাকা বা অঞ্চলসমূহ যেখানে বন্যা হলে, প্লাবন সৃষ্টি হতে পারে, এমন স্থানের বাড়িঘরগুলো ধসে পড়ার বা ভেসে যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে।

সরকার এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষ এধরনের স্থানগুলোকে সম্ভাব্য বন্যাপ্রবণ অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত করে থাকে, যেখানে ভবন ধসের সম্ভবনা থাকে। এই ধরনের চিহ্নিত এলাকায়, শুধুমাত্র ভবনের উপরের তলায় আশ্রয়গ্রহণ জীবন বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে৷ তাই, এক্ষেত্রে লোকজনকে একটি নিরাপদ স্থান খুঁজে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে৷

এই তথ্যগুলো ২০২৪ সালের জুন মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৬) “নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সুইচ” উন্নয়ন

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধস সংশ্লিষ্ট জাপানের পাঁচ স্তরের সতর্কতাজনিত স্কেল এবং প্রতিটি স্তরে অনুসরণীয় বিষয়াবলী সংশ্লিষ্ট আমাদের চলমান ধারাবাহিকের এই পর্বে আজ আমরা লোকজনের তাদের নিজস্ব “নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার সুইচ” উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করছি।

দুর্যোগ মোকাবিলা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এবং স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের সতর্কতাজনিত বার্তা জারি করে থাকে। আসন্ন দুর্যোগের সময় স্থানীয় কর্মকর্তাদের পক্ষে প্রতিটি ব্যক্তিকে আলাদা আলাদা করে সাহায্য করা সম্ভব হয় না। একারণে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে লোকজন তাদের নিজস্ব “নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার সুইচ” তৈরি করুক, যার অর্থ হলো বিষয়টি নিয়ে তারা আগে থেকে সবধরনের চিন্তাভাবনা করে রাখবে এবং অন্যত্র সরে যাওয়ার লক্ষ্যে ঠিক কখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে সেটাও তাদের জানা থাকবে।

এক্ষেত্রে স্বাভাবিক সময়ে নিজস্ব এলাকায় দুর্যোগ ঠিক কী কী ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে সেই সব বিষয়ে জানার পাশাপাশি দুর্যোগের ঝুঁকি যখন খুব বেশি হয়, সেই সময় লোকজনকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে সক্ষম হতে হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আগেই লোকজনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারী বর্ষণের ফলে নদী ফুলে উঠলে, খুব সহজেই তা গাড়িকে ভাসিয়ে নিতে পারে। এঅবস্থায় যদি স্থানীয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশনা জারি করে, তবে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যারা বাস করছেন তাদের উচিত অবিলম্বে সেই স্থান সরে যেতে শুরু করা।

বয়স্ক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এমন লোকজন, যাদের চলাফেরা করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়, তাদের উচিত সতর্কতাজনিত নির্দেশনা ‘স্তর তিন’ জারি করার সাথে সাথেই নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে সরে যেতে শুরু করা।

এই তথ্যগুলো ২০২৪ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৭) পায়ে হেঁটে সরে যাওয়া

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধস সংশ্লিষ্ট জাপানের পাঁচ স্তরের সতর্কতাজনিত স্কেল এবং প্রতিটি স্তরে অনুসরণীয় বিষয়াবলী সংশ্লিষ্ট আমাদের চলমান ধারাবাহিকের এই পর্বে আজ আমরা পায়ে হেঁটে সরে যাওয়ার সময় সতর্কতাজনিত নির্দিষ্ট কিছু দিকের উপর আলোকপাত করব।

সতর্কতাজনিত কারণে সরে যাওয়ার সময় সকলকে ট্রাউজারের মতো ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এগুলো পরিধান করলে সরে যাওয়ার সময় সহজে চলাফেরা করা যায়। আঘাত পাওয়া এড়িয়ে যেতে গ্রীষ্মকালেও লম্বা হাতার জামা এবং লম্বা প্যান্ট বেছে নিন। জুতা হিসাবে আপনি ইতোমধ্যে যা পরেছেন, সেরকম আরামদায়ক স্নিকার্স উপযুক্ত বিবেচিত হবে। বুট জুতা পানিতে ভিজে ভারী যাওয়ায় হাঁটা-চলা করতে কষ্ট হয় বলে, সেরকম কিছু পরার সুপারিশ করা হয় না। সমুদ্র সৈকতে ব্যবহারের স্যান্ডেল সহজে পিছলে যেতে পারে, তাই এগুলো এড়িয়ে চলুন।

আগে থেকে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে জরুরি একটি ব্যাগ প্রস্তুত রাখুন, যেটি হবে হালকা এবং সহজে বহনযোগ্য। আপনার পড়ে যাওয়া বা হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা এড়াতে এবং দুই হাত মুক্ত রাখার জন্য জিনিসপত্র একটি ব্যাকপ্যাকে বহন করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এসময়ে ছাতা বহন না করে বরং রেইনকোট পরিধান করা হলো জীবনের জন্য আরও নিরাপদ।

এই তথ্যগুলো ২০২৪ সালের জুন মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৮) নিরাপদ স্থানে একা যাওয়া এড়িয়ে চলুন

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধস সংশ্লিষ্ট জাপানের পাঁচ স্তরের সতর্কতাজনিত স্কেল এবং প্রতিটি স্তরে অনুসরণীয় বিষয়াবলী সংশ্লিষ্ট আমাদের চলমান ধারাবাহিকের এই পর্বেও আজ আমরা পায়ে হেঁটে সরে যাওয়ার সময় সতর্কতাজনিত নির্দিষ্ট কিছু দিকের উপর আলোকপাত করব। বিশেষ করে, এসময়ে নিরাপদ স্থানে একা যাওয়া এড়িয়ে চলুন।

সতর্কতাজনিত এই পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ একা কিছু না করার জন্য সকলকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সময় যতটা সম্ভব চেষ্টা করুন দুই বা ততোধিক লোকের দলের সঙ্গে থাকতে। সম্ভব হলে প্লাবিত এলাকা এড়িয়ে চলুন। বন্যার পানি যখন ৫০ সেন্টিমিটার বা হাঁটুর ওপরে উঠে যায়, তখন পানির চাপের কারণে এমনকি একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্যেও হাঁটা কঠিন হয়ে ওঠে। এসময়ে পানির স্রোতে যে কেউ তার ভারসাম্য হারাতে পারেন এবং অগভীর পানিতেও ভেসে যেতে পারেন।

রাস্তা প্লাবিত হলে সাধারণত পানির গভীরতা বুঝতে অসুবিধা হয়। এঅবস্থায় যেকোনো ব্যক্তিই সহজে রাস্তায় হোঁচট খেতে পারেন। খোলা ম্যানহোল, নর্দমা অথবা খালে পড়ে যেতে পারেন এবং ভেসে যেতে পারেন। আপনার যদি প্লাবিত এলাকার মধ্য দিয়ে চলাচল করা ছাড়া আর কোনো উপায় না থাকে, সেক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত গভীর প্লাবিত স্থান এবং পানির তীব্র স্রোত এড়িয়ে চলুন। এসময়ে প্লাবিত রাস্তায় সামনে এগিয়ে যাওয়া নিরাপদ হবে কি না, তা পরীক্ষা করতে একটি ছাতা বা লম্বা লাঠি ব্যবহার করুন। এভাবে সতর্কতার সাথে সামনে এগিয়ে যান।

এই তথ্যগুলো ২০২৪ সালের জুন মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৯) গাড়ির সহায়তায় সরে যাওয়া

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধস সংশ্লিষ্ট জাপানের পাঁচ স্তরের সতর্কতাজনিত স্কেল এবং প্রতিটি স্তরে অনুসরণীয় বিষয়াবলী সংশ্লিষ্ট আমাদের চলমান ধারাবাহিকের এই পর্বে আজ আমরা গাড়িতে করে সরে যাওয়ার সময় সতর্কতাজনিত নির্দিষ্ট কিছু দিকের উপর আলোকপাত করব।

এটা কখনোও ধরে নেবেন না যে আপনি সব সময় নিরাপদে গাড়িতে করে অন্যত্র সরে যেতে পারবেন। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের তাইফুন হাগিবিসের সময়, বাড়ির বাইরে মারা যাওয়া লোকের মধ্যে ৪০ শতাংশ তাদের জীবন হারিয়েছেন, মূলত গাড়িতে করে সরে যাওয়ার সময়। গাড়ি চালানোর সময় এক্ষেত্রে কারো কারো গাড়ি বন্যায় ভেসে গেছে। আবার, কেউ কেউ প্লাবিত রাস্তায় কোন গভীর গর্তের মধ্যে গাড়িসহ পড়ে গিয়ে মারা গেছেন।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, লোকজন যেন তড়িঘড়ি করে গাড়িকে নিরাপদ ভেবে গাড়ি ব্যবহার করে বাড়ি ফিরে যাওয়া কিংবা কাজে যাওয়ার চেষ্টা না করেন। বিশেষ করে, যখন কোনো এলাকা ইতোমধ্যেই ভারী বৃষ্টিপাত এবং প্রবল বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তখন গাড়ি ব্যবহারে বিরত থাকা উচিত।

এসময়ে বিশেষ করে, নদীর তীরবর্তী কিংবা ধানক্ষেতের পার্শ্ববর্তী রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানো এড়িয়ে চলা উচিত। যখন নদীর পানি ফুলে উঠে অথবা ধানক্ষেত প্লাবিত হয়, তখন রাস্তা এবং পানির মধ্যকার সীমানা অস্পষ্ট হয়ে উঠে। ফলশ্রুতিতে আপনার গাড়ি সহজেই নদী বা ধানক্ষেতের মধ্যে পড়ে যেতে পারে। অতীতে তাইফুন এবং মুষলধারে বৃষ্টির সময়ে এভাবে কিছু মানুষ মারা গেছেন।

ভারী বৃষ্টিপাতের সময় যে রাস্তা দিয়ে আপনি যাচ্ছেন, সেই রাস্তা আপনার খুব ভালোভাবে চেনা হলেও, রাস্তাটি বৃষ্টিপাতকালীন আপনার জন্য নিরাপদ কি না, সেটি নিশ্চিত হয়ে নিন।

এই তথ্যগুলো ২০২৪ সালের জুন মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(১০) গাড়ি সহজেই ভেসে যেতে পারে

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধস সংশ্লিষ্ট জাপানের পাঁচ স্তরের সতর্কতাজনিত স্কেল এবং প্রতিটি স্তরে অনুসরণীয় বিষয়াবলী সংশ্লিষ্ট আমাদের চলমান ধারাবাহিকের এই পর্বেও আমরা গাড়িতে করে সরে যাওয়ার সময় সতর্কতাজনিত নির্দিষ্ট কিছু দিকের উপর আলোকপাত করছি। আজ আমরা বন্যার পানিতে গাড়ি যে সহজেই ভেসে যেতে পারে, সেই বাস্তবতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করব।

বন্যায় প্লাবিত সড়কে গাড়ি চালানো বিপজ্জনক। এমনকি যখন মনে হয় যে বন্যা তেমন মারাত্মক নয়, তখনও পানির উচ্চতা যথেষ্ট গভীর হতে পারে। এক্ষত্রে এরকম ঝুঁকিও রয়েছে যে আপনার গাড়ি হয়তোবা পানিতে থেমে যেতে পারে কিংবা ভেসে যেতে পারে। এছাড়া, সড়ক পানিতে তলিয়ে গেলে রাস্তার উপরের পৃষ্ঠ যখন চোখে পড়বে না, সেরকম অবস্থায় গর্ত, নালা এবং সেচের খালে পড়ে যাওয়ার মতো বিপদ অজান্তেই দেখা দিতে পারে।

পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া সড়ক এড়িয়ে চলুন এবং বিকল্প পথ বেছে নিন। বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া সড়কে যদি গাড়ি চালাতেই হয়, সেরকম অবস্থায় ধীরে গাড়ি চালাবেন এবং সামনের গাড়ির থেকে আপনার গাড়ির পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখবেন। কেননা সামনের গাড়ি থেকে আসা পানির ঝাপ্টা আপনার দৃষ্টিপথ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারে এবং সামনের গাড়ি হঠাৎ থেমে গেলে ধাক্কা লেগে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে। এছাড়া, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর সময় বড় ঢেউ তৈরি হয়, যা গাড়ির ইঞ্জিনে প্রবেশ করতে পারে এবং ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

বন্যার পানিতে প্লাবিত সড়কে পানি প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার গভীর হলে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে। পানির উচ্চতা ৫০ সেন্টিমিটার কিংবা আরও বেশি হলে আপনার গাড়ি ভেসে উঠতে এবং ভেসে যেতে শুরু করতে পারে। যাত্রীবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে বন্যার পানি গাড়ির দরজার চাইতে নিচুতে বা গাড়ির নিচে অবস্থান করে, এমনটি নিশ্চিত হয়ে নিন। তবে, এবিষয়েও সতর্ক থাকবেন যে, ফুলে উঠা নদী থেকে আসা পানিতে স্রোত বেগবান হলে, এমনকি পানির উচ্চতা কম হওয়া সত্ত্বেও তা সহজেই গাড়িকে ভাসিয়ে নিতে পারে।

এই তথ্যগুলো ২০২৪ সালের জুন মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(১১) আন্ডারপাস দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় সতর্ক থাকুন

এনএইচকে দুর্যোগ প্রশমন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধস সংশ্লিষ্ট জাপানের পাঁচ স্তরের সতর্কতাজনিত স্কেল এবং প্রতিটি স্তরে অনুসরণীয় বিষয়াবলী সংশ্লিষ্ট আমাদের চলমান ধারাবাহিকের এই পর্বেও আমরা গাড়িতে করে সরে যাওয়ার সময় সতর্কতাজনিত নির্দিষ্ট কিছু দিকের উপর আলোকপাত করছি। আজ আমরা আন্ডারপাসের ভিতর দিয়ে গাড়ি চালানোকালীন সতর্কতাজনিত পরামর্শ দেবো।

রেল এবং সাধারণ সড়কের নিচ দিয়ে নির্মিত আন্ডারপাস বন্যার সময়ে বিশেষভাবে দুর্বল থাকে। চারপাশের এলাকার তুলনায় এই রাস্তা আরও বেশি নিচু হওয়ায়, খুব তাড়াতাড়ি সেখানে বৃষ্টির পানি জমতে থাকে। পানি প্লাবিত হওয়ার বিষয়ে কিছু না জেনেই গাড়ির চালকের আন্ডারপাসে প্রবেশ এবং সেখানে আটকে যাওয়ার ফলে অতীতে মারাত্মক সব দুর্ঘটনা ঘটেছে। একারণে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সময় ভারী বৃষ্টিপাতকালীন আন্ডারপাস এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সম্ভব হলে অন্য কোন রাস্তা বেছে নিন। অন্য কোন বিকল্প না থাকলে খুব সাবধানে গাড়ি চালান এবং রাস্তায় যেতে যেতে পানির মাত্রা পরীক্ষা করতে থাকুন।

গাড়ির ভিতর পানি ঢুকে গেলে, পানির চাপের কারণে গাড়ির ভিতর থেকে দরজা খোলা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সকলের জন্য পরামর্শ হলো, গাড়িতে এমন ধরনের যন্ত্র রেখে দেবেন যাতে করে সেটা দিয়ে জরুরি অবস্থায় জানালা ভাঙা যায়। গাড়ির দোকানে এধরনের যন্ত্র পাওয়া যায়। তবে, এধরনের যন্ত্রপাতি গাড়িতে না থাকলে আপনার বসার আসনের মাথা রাখার স্থানটা খুলে নিন। এর সাথে লাগানো ধাতুর রড দুটোর একটিকে দরজার ফ্রেম এবং কাঁচের মাঝখানে রেখে রডটা সামনের দিকে জোরে টানুন যাতে করে জানালা ভেঙে যায়।

দরজা খোলা ছাড়া আর কোন বিকল্প না থাকলে মনে রাখবেন যে গাড়ির ভিতর এবং বাইরের পানির মাত্রার পার্থক্য যত কম হবে দরজা খোলা ততটাই সহজ হবে।

এই তথ্যগুলো ২০২৪ সালের জুন মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।