দুর্যোগ প্রস্তুতিমূলক প্রশ্নোত্তর

একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানলে আপনার কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

(১) প্রথমে, নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিন।

একটি বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, সেসম্পর্কে শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে এনএইচকে। প্রথম এই ধারাবাহিকে, একটি বড় আকারের ভূমিকম্প আঘাত হানা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য এবং সতর্কতার পাশাপাশি এসময়ে কোন বিষয়গুলো আপনার বিবেচনায় রাখা উচিত, সে বিষয়ে অবহিত করা হবে।

একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের আগে জাপান আবহাওয়া এজেন্সি কোন কোন সময় একটি “ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা” জারি করে। তবে, এই সতর্কতা এবং বাস্তব ভূমিকম্পের মধ্যে সময়ের পার্থক্য খুব কম থাকে। তার উপর, এজেন্সি প্রায়শ সময়মতো সতর্কতা জারি করতে পারে না। এক্ষেত্রে, আপনার অগ্রাধিকার হল নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া।

বাড়ির অভ্যন্তরে থাকলেঃ
১। নিজের মাথাকে সুরক্ষিত রাখুন এবং একটি শক্ত টেবিলের নিচের জায়গার মত নিরাপদ স্থানে সরে যান।
২। দ্রুত বাইরে ছুটে যাবেন না অথবা রান্নার চুলা বা অন্যান্য আগুন সংশ্লিষ্ট গৃহস্থালির যন্ত্রপাতি বন্ধ করার জন্য অতিরিক্ত চেষ্টা করবেন না।
৩। অনেক মানুষের সাথে একত্রে কোন স্থাপনার অভ্যন্তরে থাকলে, দরজা বা বাইরে যাওয়ার পথের দিকে তাড়াহুড়ো করে ছুটে যাবেন না।
৪। ঝুলন্ত কোন বাতি বা মাথার উপরে থাকা অন্য কোন বস্তুর নিচে দাঁড়াবেন না।
৫। লিফটের ভেতরে থাকলে, নিকটতম তলায় থামুন।

বাড়ির বাইরে থাকলেঃ
দেয়াল ধ্বসে পড়া, উপর থেকে সাইনবোর্ড বা ভাঙ্গা জানালা থেকে কাঁচ নিচে এসে পড়তে পারে বিধায় দালানগুলো থেকে দূরে থাকুন।

নিরাপদ স্থানে সরে যান এবং কোন ভবনকে দৃঢ়ভাবে নির্মিত বলে মনে হলে তার ভেতরে অবস্থান করুন।

কংক্রিট ব্লকের দেয়াল বা ভেন্ডিং যন্ত্র উল্টে এসে পড়া সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।

পাথর ধ্বসে পড়া এবং হিমবাহ সংঘটিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এরকম পর্বত বা ঢালু জায়গা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

গাড়ি চালানোর সময় তাৎক্ষণিকভাবে গতি কমাবেন না। প্রথমে হ্যাযার্ড বা ঝুঁকি নির্দেশক বাতি জ্বালাবেন, এরপরে গতি কমাবেন। আর গাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সময় গাড়িতে চাবি রেখে যাওয়া উচিত।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(২) ভূমিকম্পের তীব্রতা এবং সম্ভাব্য প্রভাব-১: ১ থেকে ৪ মাত্রার তীব্রতা

একটি বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, সেসম্পর্কে শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে এনএইচকে। এবারে আমরা জাপান আবহাওয়া এজেন্সির ব্যবহৃত ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপক একটি স্কেলের ওপর আলোকপাত করব।

ভূমিকম্পের আগাম একটি সতর্কতা জারি করার সময়, আবহাওয়া এজেন্সি যে স্কেলটি ব্যবহার করে সেটি জাপানিতে শিনদো নামে পরিচিত। এটি সারা দেশে স্থাপন করা মিটার দিয়ে পরিমাপ করা হয়।

স্কেলটির রয়েছে ১০টি স্তরের মাত্রা – শূন্য, ১, ২, ৩, ৪, নিম্ন ৫, উচ্চ ৫, নিম্ন ৬, উচ্চ ৬ এবং ৭।

এজেন্সি সম্ভাব্য প্রভাব কী হতে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি মাত্রাকে সংজ্ঞায়িত করেছে এবং সেগুলো নিম্নরূপ:

শূন্য মাত্রা: লোকজন কম্পন অনুভব করেন না, তবে ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রে রেকর্ড করা যায়।

১ মাত্রা: বাড়ির ভিতরে নড়াচড়া না করা অবস্থায় কেউ কেউ সামান্য কম্পন অনুভব করতে পারেন।

২ মাত্রা: বাড়ির ভিতরে নড়াচড়া না করা অবস্থায় অনেকেই কম্পন অনুভব করতে পারেন। কেউ কেউ ঘুম থেকে জেগে যেতে পারেন। বাতির মত ঝুলন্ত বস্তু সামান্য দুলতে পারে।

৩ মাত্রা: বাড়ির ভিতরে থাকা বেশিরভাগ মানুষই কম্পন অনুভব করতে পারেন। হাঁটতে থাকা কেউ কেউ অনুভব করতে পারেন। অনেকেই ঘুম থেকে জেগে যেতে পারেন। তাকে থাকা বাসনপত্র ঝনঝন শব্দ করতে পারে। বৈদ্যুতিক তার সামান্য দুলতে পারে।

৪ মাত্রা: অধিকাংশ লোকজনই ভয়ে চমকে উঠতে পারেন। হাঁটতে থাকা অধিকাংশ লোকই কম্পন অনুভব করবেন। ঘুমন্ত অধিকাংশ লোকই জেগে যাবেন। লাইটের মত ঝুলন্ত বস্তু বেশ খানিকটা দুলবে এবং তাকে সাজানো সব বাসনপত্র ঝনঝন শব্দ করতে থাকবে। অস্থিতিশীল যেকোন সাজসজ্জা পড়ে যেতে পারে। বৈদ্যুতিক তার বেশ চোখে পড়ার মতই দুলতে থাকবে। চলন্ত গাড়িতে থাকা অবস্থায়ও হয়তো কম্পন অনুভব করতে পারবেন।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৩) ভূমিকম্পের তীব্রতা এবং সম্ভাব্য প্রভাব-২: ৫ মাত্রার তীব্রতা

একটি বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, সেসম্পর্কে শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে এনএইচকে। জাপানে ব্যবহৃত ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপক স্কেলের ওপর আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে আমরা ৫ মাত্রার তীব্রতার ওপর নজর দেব। এই ৫ মাত্রার তীব্রতাকে আবার উচ্চ এবং নিম্ন এই দুটি মাত্রায় বিভক্ত করা হয়েছে। জাপান আবহাওয়া এজেন্সি সম্ভাব্য প্রভাব কী হতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি মাত্রা এভাবে সংজ্ঞায়িত করে আসছে।

নিম্ন ৫ মাত্রা : অনেক মানুষ এতে ভয় পেয়ে যান এবং এরকম মনে করে নেন যে শক্ত কিছু একটা তাদের ধরে রাখা দরকার। বাতির মত দেয়ালে ঝুলে থাকা সামগ্রী প্রচণ্ডভাবে দুলতে থাকে। তাকে রাখা বাসনপত্র এবং বইয়ের শেলফের বইপত্র পড়ে যেতে পারে। স্থিতিশীল নয় এমন অনেক সাজসজ্জা পড়ে যায়। শক্ত ভাবে বসিয়ে না রাখা আসবাবপত্র সরে যেতে পারে এবং অস্থিতিশীল আসবাব উল্টে যেতে পারে। কোন কোন অবস্থায় জানালা ভেঙে এবং পড়ে যেতে পারে। বিদ্যুতের খুঁটির দুলতে থাকা মানুষের চোখে পড়ে। রাস্তার ক্ষয়ক্ষতিও হতে পারে।

উচ্চ ৫ মাত্রা: অনেক মানুষের জন্য হাঁটা-চলা করা কঠিন হয়ে উঠে; শক্ত কোনকিছু না ধরে হাঁটা কষ্টকর হয়। তাকে রাখা বাসনপত্র এবং বইয়ের শেলফ হয়তো পড়ে যেতে পারে। টেলিভিশন এর স্ট্যান্ড থেকে পড়ে যেতে পারে এবং শক্ত ভাবে বসিয়ে না রাখা আসবাবপত্র উল্টে যেতে পারে।
জানালা ভেঙে এবং পড়ে যেতে পারে, পোক্ত না করা কংক্রীটের ব্লক হয়তো ধ্বসে পড়তে পারে এবং দুর্বলভাবে বসানো ভেন্ডিং মেশিন উল্টে যেতে পারে। কিছু চালক সেরকম অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে যাওয়া কঠিন মনে করলে মোটরগাড়ির চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৪) ভূমিকম্পের তীব্রতা এবং সম্ভাব্য প্রভাব-৩: ৬ থেকে ৭ মাত্রার তীব্রতা

একটি বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, সেসম্পর্কে শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে এনএইচকে। জাপানে ব্যবহৃত ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপক স্কেলের ওপর আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজনের তৃতীয় পর্বে আমরা ৬ মাত্রার তীব্রতার ওপর নজর দেব যেটিকে আবার উচ্চ এবং নিম্ন এই দুটি মাত্রায় বিভক্ত করা হয়েছে। এরসাথে ৭ মাত্রার তীব্রতা নিয়েও কথা বলব। জাপান আবহাওয়া এজেন্সি সম্ভাব্য প্রভাব কী হতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি মাত্রা এভাবে সংজ্ঞায়িত করে আসছে।

নিম্ন ৬ মাত্রা: দাঁড়িয়ে থাকা খুব কঠিন হয়ে ওঠে। স্থিতিশীল নয় এমন অনেক আসবাবপত্র নড়াচড়া করতে থাকে এবং উল্টে যেতে পারে। দরজাগুলো বন্ধ হয়ে আটকে যেতে পারে। দেয়ালের টাইল এবং জানালাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ভেঙে পড়ে যেতে পারে।

উচ্চ ৬ মাত্রা: দাঁড়িয়ে থাকা বা হামাগুড়ি না দিয়ে হাঁটাচলা করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। লোকজন আচমকা শূণ্যে উঠে তারপর পড়ে যেতে পারেন। স্থিতিশীল নয় যেসব আসবাবপত্র সেগুলো নড়াচড়া করবে এবং তাদের উল্টে পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। দেয়ালের টাইল এবং জানালাগুলো ভেঙে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও খুব বেশি। পোক্ত না করা কংক্রীটের ব্লকের বেশিরভাগ দেয়ালই ধ্বসে পড়বে।

৭ (সর্বোচ্চ মাত্রা): অস্থিতিশীল আসবাবপত্রগুলোর বেশিরভাগই নড়াচড়া করবে এবং উল্টে যাবে। আবার কিছুটা শূন্যে উপরে উঠে গিয়েও পড়তে পারে। দেয়ালের টাইল এবং জানালাগুলো সম্ভবত ভেঙে পড়বে। পোক্ত করা কংক্রীটের ব্লকের দেয়ালগুলোও ধ্বসে পড়তে পারে।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৫) ভূমির কম্পন যদি বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী হয়।

উত্তর-৫: একটি বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, সেসম্পর্কে শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে এনএইচকে। এবারে ভূমির বেশ কিছুক্ষণ ব্যাপী কম্পন — এই বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা যাক।

শক্তিশালী ভূমিকম্পে যখন মাটি বেশ কিছুক্ষণ ধরে আন্দোলিত হয়, তখন বহুতল ভবনগুলো ধীর লয়ে দুলতে থাকে বেশ অনেকটা সময়। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বহুতল ভবনের ওপরও এই কম্পনের প্রভাব পড়ে।

ভূকম্পন যত শক্তিশালী, ততই অগভীর এর কেন্দ্রস্থল এবং এধরনের কম্পনে ভূমির আন্দোলন বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী হওয়ার বেশি সম্ভাবনা। এমনকি যখন ঝাঁকুনির তীব্রতা কম অনুভূত হয় ভূমিতে, তখনও ভূমির দীর্ঘায়িত কম্পন বহুতল ভবনের ওপরের দিকের তলাগুলোকে বেশ কিছু সময় ধরে দোলায়।

উত্তরপূর্ব জাপানে ২০১১ সালের মার্চ মাসে যে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল, তার দীর্ঘায়িত কম্পনের প্রভাবে কেবল টোকিও নয়, কম্পনের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় সাতশো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওসাকার বহুতল ভবনেরও ক্ষতি হয়েছিল। ওসাকার ভূমিতে তখন তিন মাত্রার কম্পন রেকর্ড করা হয়।

কম্পনে ভূমি বেশি সময় ধরে আন্দোলিত হলে, আসবাবপত্র ও নিচে চাকা লাগানো কপিমেশিন ভীষণভাবে এদিক ওদিক নড়াচড়া করতে পারে। স্বস্থানে ধরে রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকলে সেই আসবাবপত্র উল্টে যেতে পারে অথবা এদিক ওদিক সরে যেতে পারে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কম্পন না থামা পর্যন্ত অনুগ্রহ করে এমন কোথাও থাকুন যেখানে আসবাবপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র কম।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৬) বিভিন্ন পরিষেবা এবং অবকাঠামোর উপর প্রভাব।

উত্তর-৬: একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, সেসম্পর্কে শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে এনএইচকে। এই পর্বে, এটি পরিষেবা এবং অবকাঠামোর উপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, সেসম্পর্কে আপনাদের অবহিত করব।

জাপানের আবহাওয়া এজেন্সি এই বলে সতর্ক করেছে যে একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে নিম্নলিখিতভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

-গ্যাস: গ্যাস মিটারের সঙ্গে যুক্ত নিরাপত্তা যন্ত্রটি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে এবং গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। আর খুব শক্তিশালী কম্পন হলে পুরো ব্লকেই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

-পানি এবং বিদ্যুৎ: পানির সরবরাহ বন্ধ এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটতে পারে।

-রেল পরিষেবা এবং মহাসড়কগুলো: নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রেল পরিষেবা স্থগিত করা হতে পারে এবং মহাসড়কগুলোও বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। পরিচালনা কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব বিবেচনার ভিত্তিতে গতি সংক্রান্ত এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।

-টেলিফোন এবং যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমসমূহ: ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এবং এর আশেপাশের অনেক লোকজন তাদের পরিবার ও বন্ধুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বা দুর্যোগ সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা করবেন বিধায় অতিরিক্ত চাপে টেলিফোন লাইন এবং ইন্টারনেট সংযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এটি এড়ানোর জন্য টেলিযোগাযোগ পরিষেবা কোম্পানিগুলো মেসেজ বা বার্তা বোর্ড এবং বার্তা ডায়াল সেবা চালু করতে পারে।

-লিফট: ভূমিকম্প নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সংযুক্ত থাকা লিফটগুলো নিরাপত্তাজনিত কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই থেমে যাবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল এগুলো আবার চালু হবে, যার জন্য কিছুক্ষণ সময় লাগতে পারে।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৭) একটি বড় ধরনের ভূমিকম্পের পরে কী কী বিষয় দেখে রাখা দরকার।

উত্তর-৭: একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, সেসম্পর্কে শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে এনএইচকে। এই পর্বে, একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরে কী কী বিষয় দেখে রাখা দরকার, সেসম্পর্কে আপনাদের অবহিত করব।

১) নিম্ন ভূমিকম্প রোধী ভবনগুলো ভেঙ্গে পড়তে পারে। যদি আপনি দুশ্চিন্তায় ভোগেন, তাহলে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে পারেন।

২) পাহাড়ের চূড়া এবং ঢালে মাটি ধস নামতে পারে। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে, আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে পারেন। যদি আপনি এ ধরনের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে না চান, তাহলে দুইতলা বা তার উপরে থাকুন কিংবা পাহাড়ের চূড়া ও ঢাল থেকে দূরের বাড়িতে চলে যান।

৩) মাটি ভরাট করা জমি এবং নদীর কাছের এলাকায় মাটির তরলীকরণ সংঘটিত হতে পারে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের মাটি নরম হয়ে ফাটল দেখা দিতে পারে। অন্যত্র আশ্রয় নেয়ার সময় কোথায় পা ফেলছেন সেদিকে আপনার নজর রাখা উচিত।

৪) চারদিকের সংলগ্ন এলাকার অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আপনার কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করুন।

৫) বিদ্যুৎ চলে গেলে আপনাকে হয়তো মোমবাতির উপর নির্ভর করতে হতে পারে, কিন্তু আপনাকে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, যখন দরকার হবে না তখন যেন সেগুলো নিভিয়ে রাখেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় শুরু হওয়ার পরে বৈদ্যুতিক তারের ছেড়া অংশ থেকে আগুন ধরা রোধ করতে অন্যত্র আশ্রয় নেয়ার আগে বাড়ির সার্কিট ব্রেকারও আপনার বন্ধ করে রাখা উচিত।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।

(৮) পরবর্তী আরও বেশি কম্পন সম্পর্কে সজাগ থাকুন।

উত্তর-৮: একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, সেসম্পর্কে শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে এনএইচকে। প্রথম কম্পনের পর আরও বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনার ওপর কিভাবে আমাদের নজর রাখা দরকার, এবারে আমরা তা নিয়ে আপনাদের জানাবো।

বড় একটি ভূমিকম্প আঘাত হানার পর প্রায়শই পরবর্তী আঘাত নামে পরিচিত আরও এক ঝাঁক কম্পন ঘটে থাকে।

তবে কখনও প্রথম আঘাতের পর আবার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প চলে আসতে পারে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের কুমামোতো জেলায় ৬.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল, জাপানের ০ থেকে ৭ মাত্রার ভূকম্পন পরিমাপক স্কেলে যেটার তীব্রতা ছিল ৭। এর প্রায় ২৮ ঘণ্টা পর একই এলাকায় ৭.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে।

ফলে আপনার এলাকায় ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার পর যা মনে রাখা দরকার তা হচ্ছে এরকম।

১) প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রথম কম্পনের মত একই রকম তীব্রতার আরও কম্পন সম্পর্কে সজাগ থাকুন।
২) প্রথমটির চাইতে আরও বেশি তীব্র কম্পন হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে দিন দুয়েক ধরে প্রস্তুত থাকুন।
৩) পাথর ও ভূমি ধস হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সতর্ক থাকুন।
৪) জাপানি ভূকম্পন তীব্রতা পরিমাপক স্কেলে ৬ কিংবা আরও বেশি মাত্রার কম্পন হওয়ার পর ভবন ধসে পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে সতর্কতা রক্ষা করে চলুন।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের লোকজনকে পরবর্তী কম্পন এবং আরও শক্তিশালী আঘাত আসতে পারার সম্ভাবনা নিয়ে কিছু সময় ধরে সতর্কতা বজায় রাখার উপদেশ দেয়া হয়।

এই তথ্যগুলো ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত নেয়া।