স্কুলে ভর্তি প্রশ্নোত্তর

বিদেশি শিশুদের জাপানি স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করা

(১) স্কুলে ভর্তি না হওয়া বিদেশি শিশুদের বর্তমান অবস্থা কীরকম?

জাপান সরকারের চালানো এক জরিপে দেখা গেছে যে, জাপানে বসবাসরত কয়েক হাজার বিদেশি শিশু স্কুলে ভর্তি হয়নি। এই ফলাফল সারা দেশজুড়ে একধরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। আমাদের চলতি ধারাবাহিকে জাপানের বিদেশি সম্প্রদায়ের এরকম শিশুদের স্কুল গিয়ে শিক্ষা লাভ করতে সহায়তা করার জন্য আমরা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বহুভাষিক তথ্য প্রদান করবো।

ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে আজ আমরা জাপানি স্কুলের বাইরে থাকা বিদেশি শিশুদের বর্তমান অবস্থার দিকে নজর দিব।

সরকারের জরিপে দেখা গেছে যে, ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত বাধ্যতামূলক স্কুল যাওয়ার বয়সী ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৯২৩ জন বিদেশি শিশুর মধ্যে ৮ হাজার ১৮৩ জন শিশু সম্ভবত স্কুলের বাইরে ছিল। কর্মকর্তা জানতে পেরেছেন যে, এদের মধ্যে কিছু শিশু স্কুলে যোগ দিতে সক্ষম না হলেও অন্যদের স্কুলে যোগ দেয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া নিয়ে কিছুটা অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছে। মন্ত্রণালয় আরও বলছে যে, বিশাল সংখ্যক বিদেশি শিশু যে এখনও স্কুলে যোগ দিতে পারছে না, সরকার সে বিষয়ে সচেতন এবং কর্মকর্তারা বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখছেন। মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে যে, এরকম অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে দেখা যায় যে, অনেক বাবা-মা এবং আভিভাবকের জানা নেই যে, জাপানে বাধ্যতামূলক শিক্ষা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়।

আগামী পর্বে আমরা, বিদেশি শিশুদের শিক্ষা বিষয়ে জাপান সরকারের মৌলিক অবস্থানের উপর আলোকপাত করবো।

(২) বিদেশি শিশুরা কী জাপানি স্কুলে যেতে পারবে?

এক সরকারি জরিপে দেখা গেছে যে, জাপানে বসবাসকারী ৮ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিশু হয়তো স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করছে না। এই ফলাফল সারা দেশজুড়ে একধরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। আমাদের চলতি ধারাবাহিকে আমরা এই শিশুদের স্কুলে গিয়ে শিক্ষা লাভ করতে সহায়তা করার জন্য বহুভাষিক তথ্য প্রদান করবো। আজ আমরা বিদেশি শিশুদের জন্য শিক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপারে জাপান সরকারের অবস্থানের দিকে নজর দিব।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, বিদেশি শিশুরা যদি চায়, তাহলে জাপানের প্রাথমিক বা জুনিয়র হাইস্কুলে ঠিক জাপানি শিশুদের মতোই বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। মন্ত্রণালয় এও জানাচ্ছে, সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশি শিশুদের জন্য তাদের জাপানি প্রতিপক্ষদের মতই একই সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।

অন্যদিকে, মন্ত্রণালয় ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিদেশি নাগরিকরা তাদের শিশুদের শিক্ষা দিতে বাধ্য নন। আর এটাই হচ্ছে জাপানি নাগরিকদের সাথে তাদের পার্থক্য। জাপানি সংবিধান অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সুরক্ষার জন্য সব জাপানি শিশুদের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গবেষকদের মতে, এই বিষয়টি উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে যে, যতক্ষণ না পিতামাতা বা অভিভাবকরা ভর্তির জন্য আবেদন করছেন, ততক্ষণ শিশুরা স্কুলের বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

আগামী পর্বে আমরা, বিদেশি শিশুদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য কীভাবে আবেদন করতে হবে তার উপর আমরা আলোকপাত করবো।

(৩) বিদেশি শিশুরা স্কুলে ভর্তি হতে আবেদন করবেন কীভাবে?

এক সরকারি জরিপে দেখা গেছে যে, জাপানে বসবাসকারী ৮ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিশু হয়তো স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করছে না। এই ফলাফল সারা দেশজুড়ে একধরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। আমাদের চলতি ধারাবাহিকে আমরা এই শিশুদের স্কুলে গিয়ে শিক্ষা লাভ করতে সহায়তা করার জন্য বহুভাষিক তথ্য প্রদান করবো। আজ আমরা এই শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য আবেদনের পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো ।

প্রথমে জানা যাক, জাপানের পৌর সরকারের নিবন্ধিত আবাসিক তালিকায় যে বিদেশি নাগরিকদের নাম আছে, তাদের ক্ষেত্রে কী করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্থানীয় শিক্ষাবোর্ডগুলোকে এই ব্যক্তিদের ছেলেমেয়েদের স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে। যেমন, এপ্রিলে নতুন শিক্ষাবর্ষ আরম্ভ হওয়ার ৬ মাস আগে সেপ্টেম্বরে টোকিও’র পাশে চিবা শহর কর্তৃপক্ষ সেখানকার নিবন্ধিত বিদেশি নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি অ্যাপলিকেশন ফর্ম পাঠায়। এই বিদেশি অভিভাবক, যাদের ঠিকানা নিবন্ধিত রয়েছে পৌর সরকারের কাছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি “ভর্তি হতে চাই” লেখাটির পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে কর্তৃপক্ষকে ফর্মটি ফেরত পাঠান, তাহলে তার বাড়িতে স্কুলে-ভর্তি হওয়ার চিঠি পোস্ট করা হয় জানুয়ারি মাসে।

এবার জানবো, আবাসিক নিবন্ধন তালিকায় নাম নেই এমন বিদেশিদের ক্ষেত্রে কী করা হয়। স্থানীয় শিক্ষাবোর্ডগুলো বলছে, এই বিদেশি অভিভাবকরা, তারা যে পৌর এলাকায় বসবাস করেন, সেখানকার শিক্ষাবোর্ডের কাছে সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে আবেদন জানালে, তাতে যথোপযুক্তভাবে সাড়া দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে, এই বিদেশি অভিভাবকরা প্রথমে পৌর সরকারের আবাসিক তালিকায় নিজেদের নাম ও ঠিকানা নিবন্ধন করাবেন এবং তারপর পৌর সরকারের দপ্তর অথবা স্থানীয় শিক্ষাবোর্ডের কাছে সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে আবেদন জানবেন। আবাসিক তালিকায় নিবন্ধন করানোর ব্যাপারে কোনও কারণে যদি সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রেও স্কুলে ভর্তি করানোর বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এপ্রসঙ্গে টোকিও’র শিবুইয়া ওয়ার্ডের দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। এই ওয়ার্ডের শিক্ষাবোর্ড বলছে, সবচেয়ে ভাল হয় যদি বিদেশি অভিভাবক আবাসিক তালিকায় নিজের নাম ও ঠিকানা নিবন্ধন করান। কিন্তু সেটা যদি সম্ভব নাও হয়, তবু স্কুলে ভর্তি করানোর আবেদনপত্রের বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে, যদি অভিভাবক ওই এলাকায় তার বসবাসের প্রমাণ হিসেবে সম্পত্তি ইজারা নেওয়া সম্পর্কিত চুক্তির কোনো দলিল দাখিল করতে পারেন।

পরবর্তী পর্বে আমরা, জাপানে বসবাসের ভিসা বা রেসিডেন্সি স্ট্যাটাস না থাকলে কী করতে হবে, তা জানবো।

(৪) রেসিডেন্স স্ট্যাটাস না থাকা শিশুদের শিক্ষা -১

এক সরকারি জরিপে দেখা গেছে যে, জাপানে বসবাসকারী ৮ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিশু হয়তো স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করছে না। এই ফলাফল সারা দেশজুড়ে একধরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। আমাদের চলতি ধারাবাহিকে আমরা এই শিশুদের স্কুলে গিয়ে শিক্ষা লাভ করতে সহায়তা করার জন্য বহুভাষিক তথ্য প্রদান করবো। আজ আমরা জাপানে রেসিডেন্স স্ট্যাটাস বিহীন বা বাসিন্দা হিসেবে নিবন্ধিত নয়, এরকম বিদেশি শিশুদের শিক্ষাগত বিষয়াদি নিয়ে আলোকপাত করবো। এক্ষেত্রে, মূল প্রশ্ন হলো, রেসিডেন্স স্ট্যাটাস না থাকা শিশুরা জাপানের স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য যোগ্য কিনা।

এই প্রশ্নের উত্তর হল, হ্যাঁ, তারা যোগ্য।

জাপান সরকার ২০১১ সালে সংসদে এসংক্রান্ত এক মন্তব্যে জানায় যে, রেসিডেন্স স্ট্যাটাস থাকুক বা না থাকুক, স্কুলে ভর্তি হতে চাইলে, বিদেশি শিশুরা অন্যান্য জাপানি শিশুদের মতোই বিনামূল্যে শিক্ষা লাভের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। কানাগাওয়া জেলার কাওয়াসাকি শহর’সহ বিদেশি নাগরিক বসবাসকারী অনেক স্থানীয় পৌর সরকারের শিক্ষা বোর্ড তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে যে, বিদেশিদের রেসিডেন্স স্ট্যাটাস থাকুক বা না থাকুক, সকল শিশুরই শিক্ষা গ্রহণের অধিকার রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০০৬ সালে, জেলা শিক্ষা বোর্ডগুলোকে তাদের ভর্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিদেশি শিশুদের বাসস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে, একটি নমনীয় পদ্ধতি গ্রহণের আহ্বান জানায়। মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যানুযায়ী, বোর্ডগুলো শুধুমাত্র বাসিন্দা নিবন্ধন সনদপত্রই নয়, বরং এমন অন্যান্য নথিও ব্যবহার করতে পারে যা শিশুদের বাসস্থানের ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য নির্ভরযোগ্য হিসাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে। স্থানীয় শিক্ষা বোর্ডগুলো সেকারণে রেসিডেন্স স্ট্যাটাস প্রমাণ করতে না পারা শিশুদের ক্ষেত্রে, বাড়ি ভাড়ার চুক্তির মতো নথিসমূহের মাধ্যমে তাদের বাসস্থান নিশ্চিত করা সাপেক্ষে স্কুলে ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে।

পরবর্তী পর্বে আমরা, স্থানীয় শিক্ষা বোর্ডগুলো এই রেসিডেন্স স্ট্যাটাস বিহীন শিশুদের বিষয়টি কীভাবে সামাল দেয়, তা আরও বিস্তারিতভাবে জানবো।

(৫) রেসিডেন্স স্ট্যাটাস না থাকা শিশুদের শিক্ষা -২

এক সরকারি জরিপে দেখা গেছে যে, জাপানে বসবাসকারী ৮ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিশু হয়তো স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করছে না। এই ফলাফল সারা দেশজুড়ে একধরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। আমাদের চলতি ধারাবাহিকে আমরা এই শিশুদের স্কুলে গিয়ে শিক্ষা লাভ করতে সহায়তা করার জন্য বহুভাষিক তথ্য প্রদান করবো। যখন স্থানীয় শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা দেখতে পান যে, বিদেশি শিশুরা আবাসিক মর্যাদা ছাড়াই রয়েছে, তখন তা অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে জানানোটা কর্মকর্তাদের জন্য বাধ্যতামূলক কিনা, সেই দিকে আজ আমরা নজর দিবো।

না। এই ধরনের শিশুদের স্কুলের শিক্ষা দেয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুমতি রয়েছে।

এটা সত্য যে, জাপানে সরকারি কর্মচারীরা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ আইনের লঙ্ঘনের কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানাতে বাধ্য। কিন্তু জাপান সরকার ডায়েটে এবং অন্য স্থানে বলেছে যে, প্রতিবেদনের মাধ্যমে জনস্বার্থ সুরক্ষিত করন এবং তাদের সরকারী দায়িত্ব বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্জিত জনস্বার্থের তুলনা করার পর, যেখানে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ লঙ্ঘনের অভিযোগের কারণে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে না, এরকম ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে, কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি কর্মকর্তাদের রয়েছে।

এই মন্তব্য অনেকটাই অস্পষ্ট এবং বোঝার জন্য জটিল, কেননা এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং এজেন্সিগুলোর মধ্যকার সূক্ষ্ম আলোচনার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে।

এই উপরোল্লিখিত মন্তব্য নিয়ে একজন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার এনএইচকে নেয়, তখন কর্মকর্তাটি ব্যাখ্যা করেন যে, যদি তারা চান তাহলে বিদেশি শিশুদের জাপানি স্কুলে ভর্তি করাটা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের জন্য শীর্ষ অগ্রাধিকার। তবে, কর্মকর্তাটি বলেন, বোর্ডের কর্মীরা একটি লঙ্ঘনের কথা রিপোর্ট না করার সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, যদি তারা মনে করেন যে, তা করাটা তাদের উদ্দেশ্য অর্জনের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।

আগামী পর্বে আমরা, কোন শ্রেণিতে বিদেশি শিশুদের ভর্তি হওয়া দরকার তার উপর আলোকপাত করবো।

(৬) কোন শ্রেণিতে তাদের ভর্তি হওয়া দরকার

এক সরকারি জরিপে দেখা গেছে যে, জাপানে বসবাসকারী ৮ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিশু হয়তো স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করছে না। এই ফলাফল সারা দেশজুড়ে একধরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। আমাদের চলতি ধারাবাহিকে আমরা এই শিশুদের স্কুলে গিয়ে শিক্ষা লাভ করতে সহায়তা করার জন্য বহুভাষিক তথ্য প্রদান করবো। আজ আমরা বিদেশি শিশুদের কোন শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া দরকার সেই দিকে নজর দিব।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে বিদেশি শিশুদের বেলায় নীতিগতভাবে তাদের বয়সের উপর ভিত্তি করে শ্রেণি ঠিক করে নেয়া উচিত। তবে কিছু অভিভাবক চাইছেন জাপানি ভাষা ও অন্যান্য বিষয় শিখে নিতে প্রয়োজন হওয়া সময় যেন তারা পায়, শিশুরা সে জন্য যেন নিম্ন শ্রেণীতে ভর্তি হয়।

শিশুদের কোন শ্রেণিতে ভর্তি করে নিতে হবে সে সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডেসমূহের কাছে একটি নোটিশ পাঠিয়েছিল। মন্ত্রণালয় বলছে, শিক্ষা বোর্ড সাময়িকভাবে কিংবা ভূতপূর্বভাবে কেবল এদের বয়সের উপর ভিত্তি করে নয়, বরং অন্যান্য কারণেও বিদেশি শিশুদের নিম্ন শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারে। মন্ত্রণালয় বলছে, শিশুর শিক্ষাগত মান এবং জাপানি ভাষার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে কর্মকর্তারা প্রয়োজনে এরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।

আগামী পর্বে আমরা, জাপানি স্কুলের টার্ম বা সময়সূচির উপর আলোকপাত করবো।

(৭) জাপানে কত বছর ধরে শিশুরা প্রাথমিক এবং জুনিয়র হাইস্কুলে যায়

এক সরকারি জরিপে দেখা গেছে যে, জাপানে বসবাসকারী ৮ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিশু হয়তো স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করছে না। এই ফলাফল সারা দেশজুড়ে একধরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। আমাদের চলতি ধারাবাহিকে আমরা এই শিশুদের স্কুলে গিয়ে শিক্ষা লাভ করতে সহায়তা করার জন্য বহুভাষিক তথ্য প্রদান করবো। আজ আমরা জাপানে কত বছর ধরে শিশুরা প্রাথমিক এবং জুনিয়র হাইস্কুলে যায় সেই দিকে নজর দিব।

জাপানে বাধ্যতামূলক শিক্ষা নিতে হয় ৯ বছর, ৬ থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত।

শিশুরা তাদের বয়স ৬ বছর হওয়ার পরে ১লা এপ্রিল থেকে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়। ৬ বছরের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষা সম্পন্ন করার পরে, তারা ৩ বছরের জন্য জুনিয়র হাইস্কুলে যায়। সরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষা বছর শুরু হয় ১লা এপ্রিল থেকে এবং তা পরের বছরের ৩১শে মার্চ শেষ হয়।

কিছু স্কুলে শিক্ষাবর্ষকে দু’টি সেমিস্টারে ভাগ করে নেয়া হয়, তবে অন্যান্য স্কুলগুলো শিক্ষাবর্ষকে তিন টার্মে ভাগ করে নেয়।

আগামী পর্বে আমরা পাঠদান এবং পাঠ্যবইয়ের জন্য ব্যয়ের উপর আলোকপাত করবো।

(৮) স্কুলে অধ্যয়নের জন্য কী কোনো অর্থ প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে?

এক সরকারি জরিপে দেখা গেছে যে, জাপানে বসবাসকারী ৮ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিশু হয়তো স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করছে না। এই ফলাফল সারা দেশজুড়ে একধরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। আমাদের চলতি ধারাবাহিকে আমরা এই শিশুদের স্কুলে গিয়ে শিক্ষা লাভ করতে সহায়তা করার জন্য বহুভাষিক তথ্য প্রদান করবো। আজ আমরা জাপানে স্কুলে অধ্যয়নের জন্য কোনো অর্থ পরিশোধের প্রয়োজন হয় কিনা, তার উপর নজর দিব।

সরকারি প্রাথমিক এবং জুনিয়র হাই স্কুলে শ্রেণি কার্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তকের জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয় না।

বেশিরভাগ স্কুলে দুপুরের খাবার সরবরাহ করা হয় এবং সেই অনুযায়ী অভিভাবকদের কাছ থেকে এই বাবদ অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এই খরচ পৌরসভা ভেদে পরিবর্তিত হলেও ক্রমবর্ধমান সংখ্যক পৌরসভা আজকাল এগুলোকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বিনামূল্যে সরবরাহ করছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি জরিপ অনুযায়ী, ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মধ্যাহ্নভোজের মাসিক গড় খরচ ছিল ৪ হাজার ৪শ ৭৭ ইয়েন এবং নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলে ছিল ৫ হাজার ১শ ২১ ইয়েন।

এছাড়া, পৌরসভাগুলো মধ্যাহ্নভোজের এই খরচ’সহ স্কুল সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরবরাহের জন্য অর্থনৈতিক অসুবিধায় থাকা পিতামাতাদের আর্থিক সহায়তাও প্রদান করে থাকে।

আগামী পর্বে আমরা, এই ধরনের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির উপর নজর দেব।

(৯) আপনি কীভাবে “আর্থিক সহায়তা” পেতে পারেন?

এক সরকারি জরিপে দেখা গেছে যে, জাপানে বসবাসকারী ৮ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিশু হয়তো স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করছে না। এই ফলাফল সারা দেশজুড়ে একধরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। আমাদের চলতি ধারাবাহিকে আমরা এই শিশুদের স্কুলে গিয়ে শিক্ষা লাভ করতে সহায়তা করার জন্য বহুভাষিক তথ্য প্রদান করবো। আজ আমরা কীভাবে শিক্ষার্থীরা আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হলে সহায়তা পেতে পারে, তার উপর নজর দিব।

জাপানে বিদেশি শিশুরা শ্রেণি কার্যক্রম বা পাঠ্য বইয়ের জন্য অর্থ প্রদান ছাড়াই বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তবে, স্কুলের মধ্যাহ্নভোজ এবং শিক্ষা উপকরণ’সহ অন্যান্য কিছু খরচের জন্য একটি নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন পরিবারগুলোকে সাহায্য করার লক্ষ্যে, স্থানীয় পৌরসভাগুলো প্রাথমিক এবং জুনিয়র স্কুলে অধ্যয়নরত শিশুদের প্রয়োজনীয় ব্যয় বহনের জন্য একটি কর্মসূচি চালু করেছে৷

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যানুযায়ী, ২০২১ অর্থবছরে সারা দেশের সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ১৩ লক্ষ শিশু এই কর্মসূচিটি ব্যবহার করেছে৷ এখানে, এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, এই কর্মসূচির জন্য যোগ্য বিবেচিত হতে শিশুদের পিতামাতা এবং অভিভাবকদের অবশ্যই আবেদন করতে হবে৷

আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য যোগ্য পরিবারগুলোর মধ্যে সামাজিক কল্যাণ সুবিধা গ্রহণকারী পরিবারগুলোও রয়েছে। এই কর্মসূচির জন্য যোগ্যতা এবং এথেকে কত অর্থ পাওয়া যাবে, তা পৌরসভা ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। এই কর্মসূচি সম্পর্কে আগ্রহী ব্যক্তিদের, এসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য তাদের স্থানীয় শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

উল্লেখ্য, অধ্যাদেশ-নির্ধারিত শহরগুলোর মধ্যে ইয়োকোহামা শহরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষা গ্রহণ করে না। আর সেখানে মোট বার্ষিক আয় ২৫ লক্ষ ইয়েনের নিচে থাকা দুই সদস্যের পরিবারগুলো এই কর্মসূচির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। অন্যদিকে, তিন সদস্যের পরিবারের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ৩০ লক্ষ ৩ হাজার ইয়েনের নিচে। ইয়োকোহামা শহর কর্তৃপক্ষ বলছে যে, বার্ষিক এই আয়ের পরিমাণ কেবল একটি নির্দেশিকা মাত্র এবং পরিবারগুলোর উচিত হবে “আবেদন করা, যদি তারা আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকে।”

এই কর্মসূচির যারা যোগ্য, তাদের জন্য ইয়োকোহামা শহর বিনামূল্যে মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করে থাকে। এছাড়া, স্কুলের প্রস্তুতির জন্য প্রথম শ্রেণিতে প্রবেশ করা একটি শিশুকে বার্ষিক ৬৩ হাজার ১শ ইয়েন এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের ব্যয় বহনের জন্য বছরে ১৬ হাজার ৬শ ৮০ ইয়েন প্রদান করে শহর কর্তৃপক্ষ। আর ষষ্ঠ শ্রেণির শিশুরা তাদের স্নাতক বছরের বই বা ম্যাগাজিনের অর্থ পরিশোধের জন্য ১১ হাজার ইয়েন পেয়ে থাকে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, আবেদনটি সেই স্কুলেই জমা দেয়া উচিত যেখানে শিশুটির ভর্তির পরিকল্পনা রয়েছে। এসংক্রান্ত আবেদনপত্র এবং অন্যান্য বিস্তারিত বিবরণ ঠিক কোথায় পাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে জানতে অনুগ্রহ করে স্কুল বা স্থানীয় শিক্ষা বোর্ডের সাথে পরামর্শ করুন।

আগামী পর্বে আমরা বিদেশি শিশুদের স্কুলে না যাওয়ার সমস্যাটি মোকাবিলায় এনএইচকে’র বিভিন্ন প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরব।

(১০) সকল বিদেশি শিশুদের বাধ্যতামূলক শিক্ষা লাভে সক্ষম করতে এনএইচকে’র বহুভাষিক সংবাদ বিভাগের চালানো প্রচেষ্টা

এক সরকারি জরিপে দেখা গেছে যে, জাপানে বসবাসকারী ৮ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিশু হয়তো স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করছে না। এই ফলাফল সারা দেশজুড়ে একধরণের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। একটি ১০ পর্বের ধারাবাহিকে, এনএইচকে প্রয়োজনীয় তথ্য বিভিন্ন ভাষায় সম্প্রচার করছে, যাতে এইসব শিশুরা বাধ্যতামূলক শিক্ষা লাভ করতে পারে।

এনএইচকে’র বহুভাষিক মিডিয়া বিভাগ স্কুলে না যাওয়া বিপুল সংখ্যক বিদেশি শিশুদের অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। জাপানে ৩০ লক্ষেরও বেশি বিদেশি অধিবাসী রয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই এনএইচকে মনে করছে, হাজার হাজার শিশুর বাধ্যতামূলক শিক্ষার বাইরে থাকা বহুমুখী সংস্কৃতির সহাবস্থান করা একটি সমাজের বাস্তবায়নে বিশাল এক বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

বিভিন্ন ভাষায় দৈনিক সংবাদ এবং অন্যান্য তথ্য সম্প্রচার করা জাপানের একমাত্র প্রধান সংবাদ মাধ্যম হিসেবে এনএইচকে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সহায়তামূলক তথ্য সরবরাহ করা অব্যাহত রাখবে, যাতে বিদেশি নাগরিকদের শিশুরা অথবা যাদের মূল ভিত অন্য দেশে রয়েছে, তারা যাতে স্কুলে যেতে সক্ষম হয়।